রুহ ও আত্মা
সুফি মতে "রুহ" আর "আত্মা" একই জিনিস নয়, তবে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
তাদের পার্থক্য ও সম্পর্ক বোঝাতে সুফিরা সাধারণত কুরআন, হাদিস ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা দেন।
১. সংজ্ঞা (সুফি ব্যাখ্যা অনুযায়ী)
রুহ (روح) → আল্লাহর আদেশ ও আমরের জগৎ থেকে আগত পবিত্র সত্তা। এটি মানব অস্তিত্বের মূল প্রাণশক্তি, যা আল্লাহর “কুন” (হও) নির্দেশ থেকে আসে। কুরআনে বলা হয়েছে:
> "তারা আপনাকে রুহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, রুহ আমার প্রভুর আদেশের বিষয়।" (সূরা আল-ইসরা: ৮৫)
সুফিরা বলেন, রুহ মানুষের ভেতর আল্লাহর নূরের এক ঝলক।
আত্মা (نفس / Self) → এটি মানুষের ব্যক্তিত্ব, সত্তা ও অনুভূতির কেন্দ্র।
কিন্তু আত্মা বিভিন্ন স্তরের — নফসে আম্মারা (অধঃপতিত), নফসে লাওয়ামাহ (আত্ম-ভর্ত্সনাকারী), নফসে মুতমাইন্নাহ (শান্ত আত্মা)।
সুফিরা বলেন, আত্মা মানুষকে জাগতিক অনুভূতি ও ইচ্ছার সাথে যুক্ত রাখে, আর রুহ তাকে আধ্যাত্মিক জগতে টেনে নিয়ে যায়।
২. সম্পর্ক
রুহ হলো দিব্য আলো যা আল্লাহ মানুষের মধ্যে স্থাপন করেছেন।
আত্মা হলো সেই পাত্র বা অবয়ব যেখানে রুহ বসবাস করে।
যদি আত্মা পরিশুদ্ধ হয় (তাজকিয়া), রুহ আল্লাহর নূরের সাথে বেশি সংযুক্ত হয়।
যদি আত্মা অপবিত্র হয় (পাপ, অহংকার, হিংসা), রুহের দীপ্তি কমে যায় এবং মানুষ আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়।
৩. সুফি উপমা
অনেক সুফি আলেম বলেন:
> রুহ হলো সূর্যের আলো, আর আত্মা হলো কাঁচের লণ্ঠন।
কাঁচ যদি স্বচ্ছ হয়, আলো উজ্জ্বল হবে; যদি ধুলো-ময়লা জমে যায়, আলো ম্লান হয়ে যাবে।
৪. মূল উদ্দেশ্য (সুফি পথ)
সুফি তরিকায় সাধনার লক্ষ্য হলো—
1. আত্মার পরিশুদ্ধি (তাজকিয়াতুন নফস)।
2. রুহকে তার আসল উৎস আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনা (ওসল ইলাল্লাহ)।
3. এমন পর্যায়ে পৌঁছানো, যেখানে আত্মা সম্পূর্ণ শান্ত (নফসে মুতমাইন্নাহ) হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকে।
এটা আমার অনুধাবণ থেকে লেখা।
Comments
Post a Comment