মযজুব অলি আউলিয়া দর্পণ


                 "মযজুব অলি আউলিয়া দর্পণ" 

কিছু কিছু ওলী-আউলিয়া'র বাহ্যিক অবস্থা অপরিপাটি হয়ে থাকে। তাদের কাপড় থাকে ছেড়া ও পুরাতন। মাথায় চুল থাকে উস্কো-খুস্কো। এমন লোকদের সম্পর্কে ছরকারে কা-ইনাত, রাহমাতুল্লীল আলামীন, বিশ্বকূল সরদার, হুযূর [ﷺ] ইরশাদ ফরমানঃ

 عن أبى هريرة ، أن رسول الله [ﷺ]، قال : (( رب أشعث مدفوع بالأبواب لو أقسم على الله لأبره )).

 [ فضل الضعفاء والخاملين والبر والصلة والآدب ]
"অনেক এলোমেলো চুলবিশিষ্ট লোকদেরকে দরজা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের শান এ রকম যে, যদি তাঁরা কোন কিছুর ওপর আল্লাহর নামে কসম করে তখন তাদের যবান (মুখ) থেকে যা বের হয়- তাই হয়ে যায়।"
[মুসলিম, আস-সহীহ্, (فضل الضعفاء والخاملين والبر والصلة والآدب) হাদীসঃ ৬৮৪৮]

মুহাদ্দিসীনে কেরাম এই হাদীসের দুইটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রথম ব্যাখ্যা হল- তারা বলে দেবেন, আল্লাহর কসম এই কাজটি এভাবেই হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হল- তারা বলবেন, হে আল্লাহ! আপনার সত্তার কসম, এই কাজটি এভাবে করে দিন।

আল্লামা ইকবালের ভাষায়ঃ
"দুনিয়ার গরীবদের প্রতি তাকিয়ো না তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে;
তুমি কি জান, এই ধূলিরাশি ভেতরই স্বর্ণালঙ্কার লুকিয়ে আছে?

অন্যত্র তিনি বলেনঃ
"এসব অনাড়ম্বর বুযুর্গদের অবস্থা জিজ্ঞেস করো না;
ইচ্ছে হলে তাকাও তাদের কর্মের দিকে।
শুভ্র হস্তের মূসা (আঃ) বসে আছেন জাতির আড়ালে।"

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ- 'মাজালিসে গাজ্জালী'তে বলেছেনঃ

"যাহারা আপাদমস্তক মোহাব্বতে ডুবিয়া থাকেন, তাহারাই 'সালেক'। এমন কোন মুহুর্ত্ব খালি যায় না যেই মুহুর্ত্বে মোহাব্বতের জগত হইতে তাহাদের উপর প্রেমের বারিধারা বর্ষিত না হয়।"

"যাহার উপর আলমে আসরার (রহস্যজগত) হইতে প্রতি ক্ষণে হাজার অবস্থার সৃষ্টি হয় আর তিনি মর্ততার জগতে এমনভাবে বিভোর থাকেন যে, তাঁহার বুকের উপর যদি আঠার হাজার আলম চাপাইয়া দেওয়া হয়, তবুও তিনি উহার খবর রাখেন না; এমন ব্যক্তিকেই 'আরেফ' বলা হয়।" [মাজালিসে গাজ্জালী]

কেউ কেউ অস্বীকারের সুরে বলে বেড়ায়-
"তিনি কেমন ওলী(!) যিনি নামায-রোযা ইত্যাদি আদায় করেন না, বে-নামাযী কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারেন না, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য নামায ফরয, চুল, নখ, দাড়ি, গোফ, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি কিছুরই ঠিক-বেঠিক কোন খেয়াল নেই, একজন পাগল আল্লাহর ওলী হয় কি করে? (নাউযুবিল্লাহ!)
......তাদের জন্য উপরোক্ত হাদিসটি পুনরায় বিবেচনা করার অনুরোধ রইল...কষ্ট করে আবার দেখে নিন।

এখন প্রশ্ন রইল-
শরীয়তের হুকুম আহকাম পাগলের উপর বর্তায় কিনা?

***[ নাবালেগ ও পাগলের উপর জুমু'আ ফরয নয়। ]

জামা'আত সম্পর্কিত জরুরী মাসাঈলঃ
মাসআলাঃ "প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক (নাবালেগ নয়), জ্ঞানসম্পন্ন (সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া অর্থাৎ- 'পাগল' না হওয়া), স্বাধীন, সক্ষম পুরুষের জন্য জামা'আতে শামিল হওয়া ওয়াজিব। কোন ওজর ছাড়া এক ওয়াক্ত নামাযের জামা'আতও তরক করা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর কয়েক ওয়াক্ত তরককারী ফাসিক ও সাক্ষীর অযোগ্য। তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। যদি তার প্রতিবেশী এ ব্যাপারে চুপ থাকে তবে তারাও গুনাহগার হবে।" [দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, গুনিয়া, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১২৯]

পুরুষের ইমামত করার জন্য ইমাম হওয়ার শর্ত ছয়টিঃ
১. মুসলমান হওয়া।
২. বালেগ অর্থাৎ- প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। নাবালেগ ইমাম বালেগ-মুক্তাদির ইমাম হতে পারে না।
৩. সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া অর্থাৎ পাগল, অসুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি ইমাম হতে পারে না।
৪. পুরুষ হওয়া।
৫. কিরাত পড়তে সক্ষম হওয়া।
৬. মা'যূর না হওয়া।" (সংক্ষেপিত)
[বাহারে শরীয়ত; খন্ড-৩, পৃ. ১০৯]

*** [ সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া অর্থাৎ পাগল, অসুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি ইমাম হতে পারে না। ]

অতএব, শুধু মাত্র মুসলিম হলেই হবে না বাকী আরো কিছু শর্ত তার মধ্যে বিদ্যমান আছে কিনা দেখতে হবে; তার মধ্যে অন্যতম সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী অর্থাৎ- পাগল হতে পারবে না।

তাই বলে প্রত্যেক পাগল কি ওলী?
না, সেটা নয়। তবে প্রত্যেক মজযুব তথা আল্লাহর প্রেমে পাগলরাই আল্লাহর ওলী। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কিছু পাগলের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় এবং কিছু ভন্ড ওলী দাবী করে মানুষকে প্রতারিত করছে তেমনি কিছু আছে এমন; তারা মানুষকে আকৃষ্ট করবার আশায় নিজেদেরকে ওলী-আউলিয়া বলে প্রচার করছে, দুনিয়াবী ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে হিতাহিত জ্ঞানহীন হয়ে পড়েছে - তারাও পাগল তবে দুনিয়ার, তাই তাদের ভন্ডামী জনসম্মুখে উম্মোচিত করা দরকার। কিন্তু সাবধান! ঐসব ভন্ডদের কারণে যেন কোন হক্কানী আল্লাহ প্রেমিক বান্দার প্রতি বিষেদাগার করা না হয়, না কোন ওলী'র সাথে বেয়াদবী আল্লাহ বরদাশত করবেন।

ওলীগণ আল্লাহর বন্ধু হয়ে থাকেন। ওলী শব্দের অর্থ দোস্ত, বন্ধু। আর দোস্ত দোস্তের নিকটেই থাকে।

হাদীসে কুদসী'তে আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
  [ من عادى لى وليا فقد آذنته بالحرب. ]
"যে আমার ওলীর সাথে দুশমনি করে তার সাথে আমি যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ করলাম।" [বুখারীঃ আস-সহীহ্; হাদীস: ৬৫০২]

কেই বা আল্লাহর সাথে যুদ্ধের কল্পনা করতে পারে? আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ "খবরদার! কেউ যেন আমার ওলীর শানে বেয়াদবী না করে। কারণ -

[ أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ. ]
"তাদের কোন ভয় নেই, নেই কোন দুঃচিন্তা।" [আল-কুরআন; সূরা ইউনূস, ১০:৬২]

নাকের উপর মাছি বসলে নাক কেটে ফেলে দিবেন (!) নাকি মাছি তাড়াবেন? মাথাব্যথা হলে মেডিসিন ব্যবহার করা লাগে নাকি মাথাটাই উপড়ে ফেলবেন (!) নাক/মাথা কেটে ফেলা আত্মঘাতী বৈ আর কি হতে পারে।  ঠিক তেমনি শান্তির ধর্মের ওপর আঘাত হানে ফেরাউন, নমরুদের মত অন্যান্যরা... নিজেকে খোদা দাবী করেছিলো...তাই বলে আপনি স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করবেন?  মুসায়লামা কায্যাব...কাদিয়ানীদের মত অনেকে নিজেকে নবী দাবী করেছিলো...তাই বলে নবীগণের নবুওয়াত কে অস্বীকার করা যাবে না তেমনি যুগে যুগে অনেকই নিজেদেরকে ওলী-আউলিয়া বলে দাবী করেছে হয়ত ভবিষ্যতে করবে তাই বলে কি হক্কানী ওলী-আউলিয়ার অস্তিত্ব স্বীকার না করার কোন উপায় আছে কি? কেউ খোদা দাবী করে বসলো, কেউ নবী দাবী করলো আবার কেউ বা ওলী অতএব দাবীকৃত বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যহীনতা তারা স্বয়ং তাদের কে মিথ্যুক সাব্যস্ত করলো। বিবেকবানের জন্যএতটুকুই যথেষ্ট।

[ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আ'লা আলিহী ওয়া আস'হাবিহী ওয়া বারিক ওয়াসাল্লাম।]

Comments

Popular posts from this blog

ছেমা ই দালালাত

ইউসুফে ছানি গাউছুল আজম ছৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা রহঃ জীবনী দর্পণ।

কোরআন সুন্নার আলোকে পীর ও মুরিদ।