স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন হবে?
"স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন হবে?"
-- এ প্রসংগে চমৎকার এই নোটটি পড়তে পারেন, উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
একজন স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পর তিনটি চাহিদাকে কেন্দ্র করে একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। শারীরিক চাহিদা, মানসিক চাহিদা এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা। এর কোন একটির ঘাটতি বয়ে আনতে পারে অসন্তুষ্টি। আর তাই বিয়ের আগ মুহূর্তে সুন্নাহ মোতাবেক পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করার একটা রাফ প্ল্যান করে নিতে পারেন। কিছু বিষয় হাইলাইট করে যদি সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা যায় তবে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়। বিয়ে পরবর্তী রোমান্স যেনো আমৃত্যু টিকে থাকে এজন্য নিম্নের সুন্নাতি বিষয়গুলোতে আসুন সকল পুরুষরা একটু চোখ বুলিয়ে নেইঃ
১) সহধর্মিণীর হৃদয়ের ভাষা বুঝুনঃ
রাসূলুল্লাহ (সা:) একবার আয়িশাকে (রা:) বললেন, হে আয়িশা! আমি অবশ্যই জানি কখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক আর কখন অসন্তুষ্ট হও। আয়িশা (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনি কিভাবে জানেন? রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, যখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তখন তুমি এরূপ বল,
‘মুহাম্মাদের (সা:) রবের কসম, আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট হও তখন বল, ‘ইবরাহীমের (আ:) রবের কসম’!
আয়িশা (রা:) বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আল্লাহর শপথ! (রাগের সময়) আমি কেবল আপনার নামটাই বাদ দেই।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহর রাসূল (সা:) তাঁর সহধর্মিণীর হৃদয়ের অনুভূতি কতোটা গভীরভাবে বুঝতেন। আসলে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমনই হওয়া উচিত। একে অপরের সুখ দুঃখ যতো বেশী বুঝতে পারবে ততো তাদের মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করবে।
২) স্ত্রী দুঃখ পেলে সান্ত্বনা দেয়াঃ
আল্লাহর রাসূল (সা:) এর প্রিয় সহধর্মিণী সাফিয়াহ (রা:) ইসলাম গ্রহনের পূর্বে ইহূদী ছিলেন। তো রাসূলুল্লাহ (সা:) একবার সাফিয়াহর (রা:) গৃহে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন- আয়িশা (রা:) এবং যায়নাব (রা:) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে একই রক্তধারার অধিকারিণী। সুতরাং আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।
একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, তুমি কেন বললে না যে, ‘আমি আল্লাহর নবী হযরত হারুনের বংশধর ও হযরত মুসার ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) আমার স্বামী। অতএব তোমরা কোন দিক হতে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পার?’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সা:) তাঁর নিজ হাত দিয়ে সাফিয়াহর (রা:) চোখ মুছে দিলেন।
বিয়ের পর একটি দম্পতির মাঝে অবশ্যই এই গুণটি বিরাজ করতে হবে। আপনার বেটার হাফ সবসময় হাস্যজ্জ্বল থাকবে এমন ভাবাটা বোকামী। এসময় একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের কাছে টানতে হবে।
৩) স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শোয়াঃ
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা:) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়িশা (রা:) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়িশা (রা:) ঋতুবর্তী (মাসিক) অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি (সা:) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কুর’আন তিলাওয়াত করতেন।
একজন পুরুষ তার বৈবাহিক জীবনে কতোবার এভাবে স্ত্রীর উরুতে মাথা রেখে শুয়েছেন?
একটা বার ভাবুন, মহিলাদের এই সেন্সেটিভ সময়ে আপনার একটু সুক্ষ্ম আহ্লাদ তার মনের দুঃখ নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে। একবার মাথা রেখে দেখুনই না স্ত্রী সব উজাড় করে দিয়ে দিবে, প্রমিজ।
এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীরও উচিত স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে নিজের কথাগুলো শেয়ার করা। নিশ্চিত স্বামী বেচারা পরদিন আস্ত গোলাপ বাগান নিয়ে আসতেও কুন্ঠাবোধ করবেন না।
৪) একে অপরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিনঃ
উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা:) প্রায় সময় রাসূলুল্লাহর (সা:) মাথার চুল আচড়ে দিতেন। এমনকি তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর মাথা ধৌত করে দিতেন।
আমি তো মনে করি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছাকাছি আসার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, একে অপরের মাথায় সিম্পলি হাত বুলিয়ে দেয়া বা একে অপরের চুল আচড়ে দেয়ার মাধ্যমে যে ভালোবাসার আদানপ্রদান হবে তা অবিশ্বাস্য।
৫) একই পাত্র হতে খাওয়া অভ্যাস শুরু করুনঃ
যখন উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা:) গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) ঠিক প্রিয় সহধর্মিণীর ঠোট লাগা অংশে ঠোট লাগিয়ে পানি পান করতেন। যখন আয়িশা (রা:) গোশত খেতেন, তখন আল্লাহর রাসূল (সা:) আয়িশা (রা:) হতে গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আয়িশা (রা:) যে দিকটায় ঠোট লাগিয়ে খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনি (সা:) ও খাওয়া শুরু করতেন।
অফিস থেকে আসতে দেরী হোক আর যাই হোক, স্ত্রীর সাথে আজ হতে মাঝে মাঝে একই প্লেটে, একই গ্লাসে খাওয়া শুরু করুন।
(প্রতিদিন করতে বলবো না, না হয় নেকামি ভেবে বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব জেগে উঠতে পারে)। এতে হৃদতা, ভালোবাসা বাড়বে। খেতে খেতে দু’জনার হৃদয় হতে এমন ফ্রেগ্রেন্স বের হবে, আহ! শুধু সুকুন আর সুকুন।
৬) লজ্জা ফেলে মুসাহাফা করুনঃ
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু খেতেন। তাঁদের সাথে আদর আহ্লাদ করতেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা:) সিয়াম রাখতেন, ঠিক তখন তিনি স্ত্রীদের চুমু দিয়েছেন এমন কথাও হাদিসে পাওয়া যায়।
স্ত্রীর চোখে চোখ রাখা, তার কাজের মধ্যখান দিয়ে হুট করে চুমু দিয়ে আসা, আপনার ভালোবাসার গভীরতাকে আপনার স্ত্রীর অন্তরে পৌছতে সাহায্য করবে। ভালোবাসা লুকোনোর বিষয় নয়, তা প্রকাশ করার মাধ্যম ইসলাম শিখিয়েছে
আমাদের। লজ্জা ভুলে একে অপরের সম্মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করা শুরু করুন। একে অপরের সাথে মিলিত হন। কাছে টানুন। নিশ্চই স্বামী স্ত্রীর পবিত্র মিলন সাদাকাহ হিসেবে আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন, ইনশাআল্লাহ।
৭) একে অপরের মুখে হাত তুলে খাইয়ে দিনঃ
ভালোবাসা প্রদর্শনের উত্তম মাধ্যম হলো এই ক্ষুদ্র কাজটি। নিজ হাতের উপার্জন স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়াও সওয়াবের কাজ। ভালোবাসার অস্তমিত সুর্যকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে এর তুলনা নেই।
আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেন,
‘…তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও’।
৮) স্ত্রীর হাতের কাজে সাহায্য করুনঃ
আসওয়াদ (রহ:) বলেন, আমি আয়িশা (রা:) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন।
স্ত্রীর ঘরের কাজে সাহায্য করা আল্লাহর রাসূল (সা:) --এর সুন্নাহ। নিশ্চই এই সুন্নাহর ব্যাপারে পুরুষদের সজাগ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সারাদিন গৃহস্থালি কাজ করতে করতে স্ত্রী যখন হাপিয়ে উঠে, বন্ধের দিন গুলোতে পুরুষদের উচিত তাদের কাজে সাহায্য করা। এতে ভালোবাসা বাড়বে বৈ কমবে না।
৯) স্ত্রীর সাথে গল্প করতে ভুলবেন নাঃ
বাসায় স্ত্রীর সাথে যে মুহূর্তগুলো কাটাবেন, ঠিক এ সময়গুলো চেষ্টা করবেন প্রিয় মানুষের সাথে গল্প-গুজব করে কাটাতে। মাঝে মাঝে হাস্যরস এবং দুষ্টুমি করবেন। এতে আপনাদের মাঝে ভালোবাসা বাড়বে।
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রায় সময় তাঁর স্ত্রীদের গল্প শোনাতেন। আয়িশা (রা:) কে তিনি উম্মে যারাহ এর বিখ্যাত গল্প শুনিয়ে বলেছিলেন যে,
‘হে আয়িশা (রা:)! আমি তোমাকে আবু যারাহ এর মতো ভালোবাসি, যেভাবে সে উম্মে যারাহকে ভালোবাসতো’।
প্রতিদিন বাইরে যে কর্মব্যস্ত সময়ে কাটে তা প্রিয় সহধর্মিণীকে শেয়ার করতে পারেন, এতে আপনার উপর তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে জন্মাবে।
১০) স্ত্রীকে নিয়ে তার প্রিয় জায়গায় ঘুরতে যানঃ
একবার ইথিওপিয়া থেকে কিছু লোক এসে মসজিদ আন নববীতে তরবারি খেলা দেখাচ্ছিল। আয়িশা (রা:) রাসূল (সা:) -কে বললেন তিনি খেলা দেখতে চান। এমন অবস্থায় আমরা হলে কী বলতাম?
“হ্যাঁ!! উম্মাহর এই অবস্থা আর তুমি চাও খেলা দেখতে!! ছি! যাও যাও কুরআন পড়…তাফসীর পড়…”
অথচ রাসূল (সা:) আয়িশাকে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে আড়াল করে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন।
আয়িশা (রা:) রাসূলুল্লাহর পিছনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলেন। এত দীর্ঘ সময় তিনি খেলা দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বারবার এক পা থেকে আরেক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। তিনি আয়িশা (রা:) কে জিজ্ঞেস করলেন যে তাঁর দেখা শেষ হয়েছে কিনা। আয়িশা (রা:) বললেন তিনি আরো দেখতে চান। কোন আপত্তি না করে রাসূল (সা:) সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। দীর্ঘক্ষণ পর আয়িশা (রা:) নিজেই ক্লান্ত হয়ে বললেন যথেষ্ট হয়েছে। এরপর রাসূল (সা:) তাঁকে বাসায় নিয়ে আসলেন।
কি শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাই না ছিলো আল্লাহর রাসূল (সা:) এবং তাঁর সহধর্মিণীদের মাঝে! আপনিও একই সুন্নাহ অনুসরন করুন, ভালোবাসায় টইটম্বুর অবস্থা হবে।
১১) স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করুনঃ
আয়িশা (রা:) তখন হালকা গড়নের ছিলেন। রাসূল (সা:) কোন এক সফর থেকে ফিরছিলেন। সাথে ছিলেন আয়িশা (রা:)। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন সামনে এগিয়ে যেতে। তাঁরা চোখের আড়াল হলে রাসূল (সা:) আয়িশা (রা:) কে দৌড় প্রতিযোগীতায় আহ্বান করলেন। আয়িশা (রা:) জিতে গেলেন সেইবার।
এর কয়েকবছর পর একই সিনারিও। আবার রাসূল (সা:) আয়িশাকে (রা:) দৌড় প্রতিযোগিতায় আহ্বান করলেন। এবার রাসূল (সা:) জিতে গিয়ে মজা করে বললেন, “এটা আগেরটার শোধ।”
আমাদের দেশের পুরুষরা কি স্ত্রীর সাথে এমন প্রতিযোগিতা করেছে কখনো? আপনি শুরু করুন। রাসূল (সা:) কে ভালোবেসে আপনি যদি একইভাবে আপনার স্ত্রীকেও ভালোবাসতে থাকেন, এর চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না।
১২) সহধর্মিণীকে প্রিয় নামে ডাকুনঃ
আয়িশাকে (রা:) নবী (সা:) আদর করে ডাকতেন হুমায়রা বলে। হুমায়রা অর্থ ‘লাল বর্ণের রমনী’। রাসূলুল্লাহ (সা:) এর আদর মাখা ডাক শুনে আয়িশা (রা:) কাছে আসতেন তাকে জড়িয়ে ধরতেন, এরপর কবিতা পাঠ করে আল্লাহর রাসূলকে (সা:) শোনাতেন।
এমনও হয়েছে আল্লাহর রাসূল (সা:) একবার আয়িশার (রা:) দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলেন, ‘তোমার চক্ষুদ্বয় কত্ত সাদা’!
প্রিয় সহধর্মিণীকে এমন ভালো অর্থবোধক নামে ডাকতে পারেন, এতে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। একে অপরকে যতো বেশী কম্পলিমেন্ট দেয়া যায়, ঠিক ততো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ধরে রাখতে সুবিধে হবে।
১৩) প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে সাজানঃ
ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন,‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’
অর্থাৎ যাবতীয় সাজসজ্জা যেনো কেবল প্রিয় মানুষকে খুশি করার জন্যই করা হয়, এতে পস্পরের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে এবং একে অপরকে আরো অধিকভাবে কাছে টানতে পারবে।
আমাদের দেশের নারীরা তো এক্ষেত্রে বলা চলে স্বামীর সামনে ছেঁড়া পুরোনো কাপড়ই পরিধান করে। অথচ এক্ষেত্রে উচিত সবচেয়ে বেস্ট পোশাক একে অপরের জন্য পরিধান করা।
১৪) সুগন্ধী ব্যবহার করাঃ
আয়িশা (রা:) এর কাছে যেসব সুগন্ধি থাকত, সেগুলো থেকে উত্তম সুগন্ধি হজরত আয়িশা (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) কে লাগিয়ে দিতেন। সুগন্ধী আল্লাহর রাসূল (সা:) এর প্রিয় ছিলো। তাই স্বামীদের উচিত তাদের স্ত্রীদের সম্মুখে সুগন্ধী ব্যবহার করা, এবং স্ত্রীদের উচিত তাদের স্বামীদের সম্মুখে নিজেকে রঙ দিয়ে সাজানো যা তাকে আকৃষ্ট করে।
১৫) বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করাঃ
সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়’।
তাই এ ব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে ডিল করতে হবে। ভুলেও যেনো একে অপরের গোপনীয় কথা অন্যকে না বলা হয়। আমাদের সমাজে অধিকাংশ বিয়ে ভেঙ্গে যায় কেবল এই বিষয়ে অবহেলার কারনে।
১৬) স্ত্রীর পরিবার এবং আত্মীয়ের খবর নেয়াঃ
নবীজি (সা:) মাঝে মাঝে একটা ভেড়া জবাই করে বলতেন, “এই ভেড়ার মাংস খাদিজার বান্ধবীদের জন্য পাঠিয়ে দাও।”
লক্ষ করুন, নবীজি (সা:) যে কেবল খাদিজার (রা:) জীবিত অবস্থায় এমন করেছেন তা নয় বরং তিনি তো খাদিজা (রা:) মারা যাবার পরেও তাঁর বান্ধবীদের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রেখেছেন। এটা তিনি করতেন খাদিজার (রা:) প্রতি ভালোবাসা থেকে।
আবু বকর (রা:) একবার বলছিলেন, আমি তিনটি বিষয় খুব পছন্দ করি, এর মাঝে একটি হল-- ‘আমি মুহাম্মদের শ্বশুর…’ উক্ত কথা দ্বারা এটাই প্রমাণ করে আল্লাহর রাসূল (সা:) শ্বশুর বাড়ির লোকেদের কেমম মহব্বত করতেন, এবং কতোটা আপন করে নিয়েছিলেন।
তাই স্বামীদের উচিত স্ত্রী পক্ষের আত্মীয়ের এবং পরিবারের দেখাশোনা করা, এবং স্ত্রীর উচিত স্বামীর পরিবারের এবং আত্মীয়ের দেখভাল করা। তবেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে এবং ভালোবাসা অটুট থাকবে।
-------- উক্ত সুন্নাতি কাজগুলো যদি বিয়ের পূর্বে একজন পুরুষ এবং নারী চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, তবে বিয়ের পরবর্তী মুহূর্তগুলো কাটবে চমকপ্রদ। আমৃত্যু সুকুনের সাথে বসবাস করে যেতে পারবেন, যার শেষ গন্তব্য হবে আল-জান্নাত।
আল্লাহ আমাদের আমলগুলোকে আরো সুন্দর করে দিক, এবং আমাদের মাঝে যারা অবিবাহিত তাদের দ্রুত বিবাহ সম্পাদিত হওয়ার তৌফিক দিক, আমীন!
[সংকলিত]
-- এ প্রসংগে চমৎকার এই নোটটি পড়তে পারেন, উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
একজন স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পর তিনটি চাহিদাকে কেন্দ্র করে একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। শারীরিক চাহিদা, মানসিক চাহিদা এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা। এর কোন একটির ঘাটতি বয়ে আনতে পারে অসন্তুষ্টি। আর তাই বিয়ের আগ মুহূর্তে সুন্নাহ মোতাবেক পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করার একটা রাফ প্ল্যান করে নিতে পারেন। কিছু বিষয় হাইলাইট করে যদি সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা যায় তবে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়। বিয়ে পরবর্তী রোমান্স যেনো আমৃত্যু টিকে থাকে এজন্য নিম্নের সুন্নাতি বিষয়গুলোতে আসুন সকল পুরুষরা একটু চোখ বুলিয়ে নেইঃ
১) সহধর্মিণীর হৃদয়ের ভাষা বুঝুনঃ
রাসূলুল্লাহ (সা:) একবার আয়িশাকে (রা:) বললেন, হে আয়িশা! আমি অবশ্যই জানি কখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক আর কখন অসন্তুষ্ট হও। আয়িশা (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনি কিভাবে জানেন? রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, যখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তখন তুমি এরূপ বল,
‘মুহাম্মাদের (সা:) রবের কসম, আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট হও তখন বল, ‘ইবরাহীমের (আ:) রবের কসম’!
আয়িশা (রা:) বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আল্লাহর শপথ! (রাগের সময়) আমি কেবল আপনার নামটাই বাদ দেই।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহর রাসূল (সা:) তাঁর সহধর্মিণীর হৃদয়ের অনুভূতি কতোটা গভীরভাবে বুঝতেন। আসলে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমনই হওয়া উচিত। একে অপরের সুখ দুঃখ যতো বেশী বুঝতে পারবে ততো তাদের মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করবে।
২) স্ত্রী দুঃখ পেলে সান্ত্বনা দেয়াঃ
আল্লাহর রাসূল (সা:) এর প্রিয় সহধর্মিণী সাফিয়াহ (রা:) ইসলাম গ্রহনের পূর্বে ইহূদী ছিলেন। তো রাসূলুল্লাহ (সা:) একবার সাফিয়াহর (রা:) গৃহে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন- আয়িশা (রা:) এবং যায়নাব (রা:) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে একই রক্তধারার অধিকারিণী। সুতরাং আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।
একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, তুমি কেন বললে না যে, ‘আমি আল্লাহর নবী হযরত হারুনের বংশধর ও হযরত মুসার ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) আমার স্বামী। অতএব তোমরা কোন দিক হতে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পার?’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সা:) তাঁর নিজ হাত দিয়ে সাফিয়াহর (রা:) চোখ মুছে দিলেন।
বিয়ের পর একটি দম্পতির মাঝে অবশ্যই এই গুণটি বিরাজ করতে হবে। আপনার বেটার হাফ সবসময় হাস্যজ্জ্বল থাকবে এমন ভাবাটা বোকামী। এসময় একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের কাছে টানতে হবে।
৩) স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শোয়াঃ
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা:) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়িশা (রা:) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়িশা (রা:) ঋতুবর্তী (মাসিক) অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি (সা:) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কুর’আন তিলাওয়াত করতেন।
একজন পুরুষ তার বৈবাহিক জীবনে কতোবার এভাবে স্ত্রীর উরুতে মাথা রেখে শুয়েছেন?
একটা বার ভাবুন, মহিলাদের এই সেন্সেটিভ সময়ে আপনার একটু সুক্ষ্ম আহ্লাদ তার মনের দুঃখ নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে। একবার মাথা রেখে দেখুনই না স্ত্রী সব উজাড় করে দিয়ে দিবে, প্রমিজ।
এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীরও উচিত স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে নিজের কথাগুলো শেয়ার করা। নিশ্চিত স্বামী বেচারা পরদিন আস্ত গোলাপ বাগান নিয়ে আসতেও কুন্ঠাবোধ করবেন না।
৪) একে অপরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিনঃ
উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা:) প্রায় সময় রাসূলুল্লাহর (সা:) মাথার চুল আচড়ে দিতেন। এমনকি তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর মাথা ধৌত করে দিতেন।
আমি তো মনে করি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছাকাছি আসার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, একে অপরের মাথায় সিম্পলি হাত বুলিয়ে দেয়া বা একে অপরের চুল আচড়ে দেয়ার মাধ্যমে যে ভালোবাসার আদানপ্রদান হবে তা অবিশ্বাস্য।
৫) একই পাত্র হতে খাওয়া অভ্যাস শুরু করুনঃ
যখন উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা:) গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) ঠিক প্রিয় সহধর্মিণীর ঠোট লাগা অংশে ঠোট লাগিয়ে পানি পান করতেন। যখন আয়িশা (রা:) গোশত খেতেন, তখন আল্লাহর রাসূল (সা:) আয়িশা (রা:) হতে গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আয়িশা (রা:) যে দিকটায় ঠোট লাগিয়ে খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনি (সা:) ও খাওয়া শুরু করতেন।
অফিস থেকে আসতে দেরী হোক আর যাই হোক, স্ত্রীর সাথে আজ হতে মাঝে মাঝে একই প্লেটে, একই গ্লাসে খাওয়া শুরু করুন।
(প্রতিদিন করতে বলবো না, না হয় নেকামি ভেবে বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব জেগে উঠতে পারে)। এতে হৃদতা, ভালোবাসা বাড়বে। খেতে খেতে দু’জনার হৃদয় হতে এমন ফ্রেগ্রেন্স বের হবে, আহ! শুধু সুকুন আর সুকুন।
৬) লজ্জা ফেলে মুসাহাফা করুনঃ
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু খেতেন। তাঁদের সাথে আদর আহ্লাদ করতেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা:) সিয়াম রাখতেন, ঠিক তখন তিনি স্ত্রীদের চুমু দিয়েছেন এমন কথাও হাদিসে পাওয়া যায়।
স্ত্রীর চোখে চোখ রাখা, তার কাজের মধ্যখান দিয়ে হুট করে চুমু দিয়ে আসা, আপনার ভালোবাসার গভীরতাকে আপনার স্ত্রীর অন্তরে পৌছতে সাহায্য করবে। ভালোবাসা লুকোনোর বিষয় নয়, তা প্রকাশ করার মাধ্যম ইসলাম শিখিয়েছে
আমাদের। লজ্জা ভুলে একে অপরের সম্মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করা শুরু করুন। একে অপরের সাথে মিলিত হন। কাছে টানুন। নিশ্চই স্বামী স্ত্রীর পবিত্র মিলন সাদাকাহ হিসেবে আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন, ইনশাআল্লাহ।
৭) একে অপরের মুখে হাত তুলে খাইয়ে দিনঃ
ভালোবাসা প্রদর্শনের উত্তম মাধ্যম হলো এই ক্ষুদ্র কাজটি। নিজ হাতের উপার্জন স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়াও সওয়াবের কাজ। ভালোবাসার অস্তমিত সুর্যকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে এর তুলনা নেই।
আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেন,
‘…তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও’।
৮) স্ত্রীর হাতের কাজে সাহায্য করুনঃ
আসওয়াদ (রহ:) বলেন, আমি আয়িশা (রা:) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন।
স্ত্রীর ঘরের কাজে সাহায্য করা আল্লাহর রাসূল (সা:) --এর সুন্নাহ। নিশ্চই এই সুন্নাহর ব্যাপারে পুরুষদের সজাগ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সারাদিন গৃহস্থালি কাজ করতে করতে স্ত্রী যখন হাপিয়ে উঠে, বন্ধের দিন গুলোতে পুরুষদের উচিত তাদের কাজে সাহায্য করা। এতে ভালোবাসা বাড়বে বৈ কমবে না।
৯) স্ত্রীর সাথে গল্প করতে ভুলবেন নাঃ
বাসায় স্ত্রীর সাথে যে মুহূর্তগুলো কাটাবেন, ঠিক এ সময়গুলো চেষ্টা করবেন প্রিয় মানুষের সাথে গল্প-গুজব করে কাটাতে। মাঝে মাঝে হাস্যরস এবং দুষ্টুমি করবেন। এতে আপনাদের মাঝে ভালোবাসা বাড়বে।
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রায় সময় তাঁর স্ত্রীদের গল্প শোনাতেন। আয়িশা (রা:) কে তিনি উম্মে যারাহ এর বিখ্যাত গল্প শুনিয়ে বলেছিলেন যে,
‘হে আয়িশা (রা:)! আমি তোমাকে আবু যারাহ এর মতো ভালোবাসি, যেভাবে সে উম্মে যারাহকে ভালোবাসতো’।
প্রতিদিন বাইরে যে কর্মব্যস্ত সময়ে কাটে তা প্রিয় সহধর্মিণীকে শেয়ার করতে পারেন, এতে আপনার উপর তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে জন্মাবে।
১০) স্ত্রীকে নিয়ে তার প্রিয় জায়গায় ঘুরতে যানঃ
একবার ইথিওপিয়া থেকে কিছু লোক এসে মসজিদ আন নববীতে তরবারি খেলা দেখাচ্ছিল। আয়িশা (রা:) রাসূল (সা:) -কে বললেন তিনি খেলা দেখতে চান। এমন অবস্থায় আমরা হলে কী বলতাম?
“হ্যাঁ!! উম্মাহর এই অবস্থা আর তুমি চাও খেলা দেখতে!! ছি! যাও যাও কুরআন পড়…তাফসীর পড়…”
অথচ রাসূল (সা:) আয়িশাকে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে আড়াল করে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন।
আয়িশা (রা:) রাসূলুল্লাহর পিছনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলেন। এত দীর্ঘ সময় তিনি খেলা দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বারবার এক পা থেকে আরেক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। তিনি আয়িশা (রা:) কে জিজ্ঞেস করলেন যে তাঁর দেখা শেষ হয়েছে কিনা। আয়িশা (রা:) বললেন তিনি আরো দেখতে চান। কোন আপত্তি না করে রাসূল (সা:) সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। দীর্ঘক্ষণ পর আয়িশা (রা:) নিজেই ক্লান্ত হয়ে বললেন যথেষ্ট হয়েছে। এরপর রাসূল (সা:) তাঁকে বাসায় নিয়ে আসলেন।
কি শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাই না ছিলো আল্লাহর রাসূল (সা:) এবং তাঁর সহধর্মিণীদের মাঝে! আপনিও একই সুন্নাহ অনুসরন করুন, ভালোবাসায় টইটম্বুর অবস্থা হবে।
১১) স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করুনঃ
আয়িশা (রা:) তখন হালকা গড়নের ছিলেন। রাসূল (সা:) কোন এক সফর থেকে ফিরছিলেন। সাথে ছিলেন আয়িশা (রা:)। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন সামনে এগিয়ে যেতে। তাঁরা চোখের আড়াল হলে রাসূল (সা:) আয়িশা (রা:) কে দৌড় প্রতিযোগীতায় আহ্বান করলেন। আয়িশা (রা:) জিতে গেলেন সেইবার।
এর কয়েকবছর পর একই সিনারিও। আবার রাসূল (সা:) আয়িশাকে (রা:) দৌড় প্রতিযোগিতায় আহ্বান করলেন। এবার রাসূল (সা:) জিতে গিয়ে মজা করে বললেন, “এটা আগেরটার শোধ।”
আমাদের দেশের পুরুষরা কি স্ত্রীর সাথে এমন প্রতিযোগিতা করেছে কখনো? আপনি শুরু করুন। রাসূল (সা:) কে ভালোবেসে আপনি যদি একইভাবে আপনার স্ত্রীকেও ভালোবাসতে থাকেন, এর চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না।
১২) সহধর্মিণীকে প্রিয় নামে ডাকুনঃ
আয়িশাকে (রা:) নবী (সা:) আদর করে ডাকতেন হুমায়রা বলে। হুমায়রা অর্থ ‘লাল বর্ণের রমনী’। রাসূলুল্লাহ (সা:) এর আদর মাখা ডাক শুনে আয়িশা (রা:) কাছে আসতেন তাকে জড়িয়ে ধরতেন, এরপর কবিতা পাঠ করে আল্লাহর রাসূলকে (সা:) শোনাতেন।
এমনও হয়েছে আল্লাহর রাসূল (সা:) একবার আয়িশার (রা:) দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলেন, ‘তোমার চক্ষুদ্বয় কত্ত সাদা’!
প্রিয় সহধর্মিণীকে এমন ভালো অর্থবোধক নামে ডাকতে পারেন, এতে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। একে অপরকে যতো বেশী কম্পলিমেন্ট দেয়া যায়, ঠিক ততো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ধরে রাখতে সুবিধে হবে।
১৩) প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে সাজানঃ
ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন,‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’
অর্থাৎ যাবতীয় সাজসজ্জা যেনো কেবল প্রিয় মানুষকে খুশি করার জন্যই করা হয়, এতে পস্পরের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে এবং একে অপরকে আরো অধিকভাবে কাছে টানতে পারবে।
আমাদের দেশের নারীরা তো এক্ষেত্রে বলা চলে স্বামীর সামনে ছেঁড়া পুরোনো কাপড়ই পরিধান করে। অথচ এক্ষেত্রে উচিত সবচেয়ে বেস্ট পোশাক একে অপরের জন্য পরিধান করা।
১৪) সুগন্ধী ব্যবহার করাঃ
আয়িশা (রা:) এর কাছে যেসব সুগন্ধি থাকত, সেগুলো থেকে উত্তম সুগন্ধি হজরত আয়িশা (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) কে লাগিয়ে দিতেন। সুগন্ধী আল্লাহর রাসূল (সা:) এর প্রিয় ছিলো। তাই স্বামীদের উচিত তাদের স্ত্রীদের সম্মুখে সুগন্ধী ব্যবহার করা, এবং স্ত্রীদের উচিত তাদের স্বামীদের সম্মুখে নিজেকে রঙ দিয়ে সাজানো যা তাকে আকৃষ্ট করে।
১৫) বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করাঃ
সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়’।
তাই এ ব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে ডিল করতে হবে। ভুলেও যেনো একে অপরের গোপনীয় কথা অন্যকে না বলা হয়। আমাদের সমাজে অধিকাংশ বিয়ে ভেঙ্গে যায় কেবল এই বিষয়ে অবহেলার কারনে।
১৬) স্ত্রীর পরিবার এবং আত্মীয়ের খবর নেয়াঃ
নবীজি (সা:) মাঝে মাঝে একটা ভেড়া জবাই করে বলতেন, “এই ভেড়ার মাংস খাদিজার বান্ধবীদের জন্য পাঠিয়ে দাও।”
লক্ষ করুন, নবীজি (সা:) যে কেবল খাদিজার (রা:) জীবিত অবস্থায় এমন করেছেন তা নয় বরং তিনি তো খাদিজা (রা:) মারা যাবার পরেও তাঁর বান্ধবীদের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রেখেছেন। এটা তিনি করতেন খাদিজার (রা:) প্রতি ভালোবাসা থেকে।
আবু বকর (রা:) একবার বলছিলেন, আমি তিনটি বিষয় খুব পছন্দ করি, এর মাঝে একটি হল-- ‘আমি মুহাম্মদের শ্বশুর…’ উক্ত কথা দ্বারা এটাই প্রমাণ করে আল্লাহর রাসূল (সা:) শ্বশুর বাড়ির লোকেদের কেমম মহব্বত করতেন, এবং কতোটা আপন করে নিয়েছিলেন।
তাই স্বামীদের উচিত স্ত্রী পক্ষের আত্মীয়ের এবং পরিবারের দেখাশোনা করা, এবং স্ত্রীর উচিত স্বামীর পরিবারের এবং আত্মীয়ের দেখভাল করা। তবেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে এবং ভালোবাসা অটুট থাকবে।
-------- উক্ত সুন্নাতি কাজগুলো যদি বিয়ের পূর্বে একজন পুরুষ এবং নারী চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, তবে বিয়ের পরবর্তী মুহূর্তগুলো কাটবে চমকপ্রদ। আমৃত্যু সুকুনের সাথে বসবাস করে যেতে পারবেন, যার শেষ গন্তব্য হবে আল-জান্নাত।
আল্লাহ আমাদের আমলগুলোকে আরো সুন্দর করে দিক, এবং আমাদের মাঝে যারা অবিবাহিত তাদের দ্রুত বিবাহ সম্পাদিত হওয়ার তৌফিক দিক, আমীন!
[সংকলিত]
Comments
Post a Comment