হযরত শাহসূফী মাওলানা সৈয়দ বজলুল করিম মন্দাকিনী (রহঃ) জীবন দর্পন।

 বাহারুল উলুম মুফতিয়ে আজম ইমামে আলা হযরত হযরত শাহসূফী মাওলানা সৈয়দ বজলুল করিম মন্দাকিনী (রহঃ) জীবন দর্পন।



মাইজভাণ্ডারী দর্শন ইসলাম তথা সুফিবাদের কৃষ্টি সভ্যতার অংশ বিশেষ। মাইজভাণ্ডারী দর্শনের কথা উঠতেই সর্বপ্রথম উঠে আসে এ দর্শনে রয়েছে ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকলের উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার। আল্লাহ পাক স্বয়ং অসাম্প্রদায়িক৷ তাই এই মহান দর্শনেও ধর্মের কোন বাচ বিচার নেই। সকল ধর্মের সকল গোত্রের লোকের জন্য এই মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকা ও দর্শন পীঠস্থানে পরিনত হয়েছে। বাংলার জমিনে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা হিসেবেও সর্বমহলে এর গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপক।

অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য এবং ধর্মের সত্তিকার স্বরুপ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বত্রানকর্তৃত্ব সম্পন্ন গাউসুল আযম রুপে হুজুর গাউসুল আযম মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী এ ধরাধামে আবির্ভূত হন। মানব সমাজকে ঐশী প্রেমের আলোয় আলোকিত করতে সৃষ্টি করেন পবিত্র মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকা বা মাইজভাণ্ডারী দর্শন।

রুমিয়ে বাঙ্গাল, হযরত মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনীর ভাষায়,

“যুগে যুগে তুমি বিভিন্ন প্রদেশে, নবী অলী নামে মুনিঋষী বেশে ;

ঘোর অন্ধকার হতে মানবীকে আলোকে টানিয়ে আন।”

গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর অন্যতম খলীফা মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনীর জীবনি…

মন্দাকিনী মানে ‘স্বর্গের নদী’। যেমন নাম, সৌন্দর্যেও অতুলনীয় সেই গ্রাম। সবুজাভ মাঠ গুলোকে বিভাজন করেছে সমান্তরাল রেললাইন। নাজিরহাট রেলওয়ে স্টেশনও এই গ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত। রেলপথ ধরে উত্তর দিকে মিনিট তিনেক হাঁটলেই নাজিরহাট কলেজ ক্যাম্পাস, পাশেই নাজিরহাট কলেজিয়েট স্কুল।

যাহোক, মূল কথায় আসি গ্রামটি দুইভাগে বিভক্ত। রেললাইনের পশ্চিম পার্শ্ব পশ্চিম মন্দাকিনী আর পূর্ব পার্শ্ব পূর্ব মন্দাকিনী। আমি পূর্বের বাসিন্দা হলেও অন্তরটা সবসময় পশ্চিম মন্দাকিনীর দিকে আকর্ষিত।

কে টানে? প্রেমের গুরু ছাড়া আর কে। আসুন পরিচিত হই সেই প্রেমের গুরুর সাথে।

জন্মসূত্রে নাম “বজলুল করিম”, করিম বক্স হিসেবে প্রকাশ আছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার অন্তর্গত ১নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মন্দাকিনী গ্রামে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ১৮৮১ সালে জন্ম।

তৎকালীন কোলকাতার একটি মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করে স্থানীয় কাটিরহাট এম ই স্কুলের হেড মাওলানা (ধর্মীয় শিক্ষক) হিসেবে ছিলেন। পরবর্তীতে বার্মায় (বর্তমান মায়ানমার) ছিলেন দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর।

এই স্বভাবকবি, গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কেবলা কা’বা এবং বাবা ভান্ডারী কেবলা কা’বা এঁর একান্ত সোহবত পেয়ে ধন্য হন। গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কেবলা কাবায়ে আলমের খলিফাদেঁর মধ্যে অন্যতম ছিলেন মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি ফানা-ফিস-শায়খ ছিলেন। মওলানা মন্দাকিনী নিজের নামের শেষে মুর্শিদ কেবলার নাম সংযোজন করে তাঁর প্রমাণ রেখে গেছেন। তিনি নিজের নাম লিখতেন বজলুল করিম মন্দাকিনী আহমদীউল কাদেরী। তাঁর মুর্শিদ গাউসুল আ’যম হযরত কেবলা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারি কাদ্দাসা সিররাহুল আজিজ এঁর নাম।

“মাইজভান্ডারি কালামের বুলবুল” খ্যাত মওলানা মন্দাকিনীর স্বরচিত অসংখ্য কালাম আজ মাইজভান্ডারি পরিমন্ডলে মশহুর এবং আশেকানে মাইজভান্ডারির হৃদয়ে শোভিত।

উল্লেখ্য, মাওলানা মন্দাকিনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর রচিত একটি মাইজভান্ডারি কালামের বই যা তাঁদের বাড়ির ছাদে সংরক্ষিত ছিলো, যা একটি সাপ সার্বক্ষণিক পাহারা দিয়ে রাখতো।

তাঁর অসংখ্য মাইজভান্ডারি কালামের মধ্যে যেই কালামগুলো মশহুর সেগুলো হলোঃ

* কেন চিনলিনারে মন, গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি মওলানা কেমন।

* দ্বারেতে ভিখারির আগমন ভান্ডারী ধনরে!

* আমি শরাবি চলেছি পন্থে, সরে দাঁড়াওরে যত ছুফীগণ।

* আমার মরণ কালে ঢোল-বেলা বাজাইও দরবারী ভাইরে।

* আমি কি তোমার গোলাম নই, আমি কি তোমার গোলাম নই, হলে কেন এই জগতে এত জ্বালা সই।

* কে তোমারে চিনতে পারে, কে তোমারে চিনতে পারে,

তোমার কার্য-কর্ম্ম রীতি-নীতি সব চলেছে আড়েঠারে।

* রক্ষা কর মাইজভান্ডারি রক্ষা কর মাইজভান্ডারি, অসহ্য হয়েছে জ্বালা আর জ্বালা সহিতে নারি।

এই মহান জাতে পাক ৭২ বছর বয়সে, ২৯ মুহররম হিজরী ১৩৭৩ সন মোতাবেক ২২শে আশ্বিন ১৩৬০ বাংলা, ১৯৫৮ সালের ৯ ই অক্টোবর জুমাবার সকাল ১০ টায় ওফাত প্রাপ্ত হন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

নিজের অনাড়ম্বরতা প্রকাশে ফার্সিতে একটি কবিতা লিখে যান এই মহান অলিয়ে কামেল তাঁর অনুবাদ নিম্নরূপঃ

নহি আমি যোগ্য এমন, সমাধি মোর রওজা হবে,

নাহি তেমন কর্ম আমার, জ্বলবে তথা মোমের বাতি ফুলে ফুলে আচ্ছাদিবে।

সত্য প্রেমিক স্বাধ্বি গণে, সদা করি এই ভরসা,

ক্ষমা ও মাগফিরাত পাব যদি তাঁরা করেন দোয়া।

তেমন কোনো আলেমও নই, সুখ্যাতিমান জগৎ জোড়া,

এমন কোন গুণাগুণ নাই দরবেশের নিশানা ভরা।

কর্মে আমি অধম এক করিম নামের গুনাহগার,

তবে তো হই নগণ্য এক গোলামে শাহে ভান্ডার।

—- অনুবাদঃ এ এ এম সাফওয়ানুল করিম মন্দাকিনী।

তাঁরই বেলায়তী ছায়া তলে আমরা মন্দাকিনীবাসী। ২৯ শে মুহররম রুমিয়ে বাঙ্গাল, মুশকিল কোশা, খলিফা ও শায়েরে গাউসে ভান্ডারী হযরত মওলানা বজলুল করিম আহমদীউল-কাদেরী মন্দাকিনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর ওরসে পাক। তাঁর রূহানী-ঈমানি-এলমি ফয়েজ ও বরকত আমাদের নসীব হোক।

কি গাহিব শান তোমার ওগো করিম বাবাজান,

নিজ গুণে কর দয়া, এই অধমের আবেদন।

তথ্য সংগ্রহ ও অনুলিখন ঃ মোহাম্মদ সুফি ওসমান গনি। 

Comments

Popular posts from this blog

ছেমা ই দালালাত

ইউসুফে ছানি গাউছুল আজম ছৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা রহঃ জীবনী দর্পণ।

কোরআন সুন্নার আলোকে পীর ও মুরিদ।