রাসূল(ﷺ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতের ফজিলত


 রাসূল(ﷺ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতের ফজিলত



হুজুর পূরনুর (ﷺ)-এর পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারতের ফযীলত। 


★১. সাধারণত মহামান্য নবীগণের (’আলাইহিমুস সলাতু ওয়াস সালাম) সমাধিকে “রওজা শরীফ”, সম্মানিত ওলী আল্লাহগণের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) সমাধিকে “মাজার শরীফ” এবং সাধারণ মুসলমানের সমাধিকে আরবিতে “কবর” (قبر) বলা হয়।


ফার্সী “রওজা” শব্দটি আরবি “রাওদ্বাহ” (روضة) থেকে এসেছে – যার অর্থ বাগান, তৃণভূমি, উদ্যান ইত্যাদি। আর আরবি “মাজার” (مزار) শব্দটির অর্থ জিয়ারত বা পরিদর্শনের জায়গা।মাজার একটি আরবী শব্দ,যা এখন শুধু বাংলাতেই ব্যবহৃত হয়। শব্দটি ফারসী দরগাহ শব্দের প্রতিশব্দ।এর ধাতুগত অর্থ ‘যিয়ারতের স্থান’। মাজার বলতে সাধারণত আওলিয়া-দরবেশগণের সমাধিস্থলকে বুঝায়।


এখন মনে একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর দাফনস্থল বা কবরকে রওজা বলা হয় কেন?? ভুল বুঝবেন না; বর্তমানে কিছু জালিম, মালাউন, মুনাফিক,আহলে শয়তান নবিজীর রওজামোবারক কে কবর বলতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে কেননা তারা রওজা মানতে রাজি না।


চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন রওজা বলা হয়?

মূলত রওজা শব্দের অর্থ বাগান। এখানে রওজা বা বাগান দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘জান্নাতের একটি বাগান।’ যেহেতু তাঁর কবরটি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান। তাই এ অর্থে তাঁর কবরকে ‘রওজায়ে আতহার’ (পবিত্র বাগান), রওজা শরিফ ইত্যাদি বলা হয়

দলিল

[সহীহ বুখারী ১/১৮৬,সহীহ মুসলিম ১/২০১,মুসনাদে আহমদ ২/২৪৬,৩৬৭; কবরকে রওযা বলা : জামে তিরমিযী ২/৭৩; (কবরে নিষিদ্ধ কার্যাবলি 🙂 সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; জামে তিরমিযী ১/৭৩; সুনানে নাসাঈ ১/২২২; সুনানে আবু দাউদ ২/৪৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান ৭/৪৫২-৪৫৪; রূহুল মাআনী ৮/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আননাহরুল ফায়েক ২/৪২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৭২; মাদখাল ইবনুল হাজ ৩/২৭৩-২৭৪; ইগাছাতুল লাহফান ১/২২২ (কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি 🙂 সহীহ মুসলিম ১/৩১৩; শরহু মুসলিম নববী ৭/৪৩; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১৬৯; শরহুস সুদূর পৃ. ৩১১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫-১৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০-৩৪৩]

রাসুল ﷺ বলেছেন : আমার ঘর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের একটি টুকরা (রিয়াজুল জান্নাহ) এবং আমার মিম্বরটি আমার হাউজের উপর স্থাপিত”।

[সহীহ বুখারী-১১৩৮]


রওজার পশ্চিম দিকে রাসুল (ﷺ)-এর মিম্বার পর্যন্ত স্থানটুকুকে ‘রিয়াজুল জান্নাত’ বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়।এটি দুনিয়ায় একমাত্র জান্নাতের অংশ।

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,‘আমার মিম্বার ও ঘরের মাঝখানের অংশটুকু জান্নাতের বাগিচাসমূহের একটি বাগিচা।’

[সহিহ বুখারি ১১৯৫]


মসজিদে নববীর পাশে আয়েশা (রা.)-এর হুজরায় অবস্থিত নবীজির কবর। তারই পাশে হজরত আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর কবর। এর পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি আছে,এখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর সমাধি হবে।

[তিরমিজি ৩৬১৭]


✌মসজিদে নববীর পূর্ব দিকে অবস্থিত বাকি গোরস্তানে অসংখ্য সাহাবা, তাবেইন,আউলিয়া ও নেককার মুসলমানের কবর রয়েছে। এর মধ্যে হজরত উসমান (রা:),ইবনে মাসউদ,ফাতিমা(রা:),আয়েশা (রা:), রাসুল (ﷺ)-এঁর দুধ মা হালিমা (রা:), চাচা আব্বাস (রা:),রাসুল(ﷺ)-এঁর ছেলে ইব্রাহিম আনহুম সহ অনেকের কবর শরীফ আছে।রাসুল (ﷺ) প্রায়ই বাকি জিয়ারতে যেতেন।


★২. রাসূল (ﷺ)-এর রওজা মোবারকের মাটি আল্লাহর আরশের চেয়ে উত্তম!!-সুবহানআল্লাহ


(ক.) ফতয়ায়ে শামী এবারত হল এইঃ ”রওজা মোবারকের যে মাটি নবী করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর দেহ মোবারকের সাথে লেগে আছে,তা আসমান জমীন- এমনকি আল্লাহর আরশ আযীম হতেও উত্তম”।


[ফতয়ায়ে শামী,৩য় খন্ড,যেয়ারত অধ্যায়।কৃতঃ ইমাম আবেদীন শামী (রহঃ)]


(খ.) রওজা মোবরক যদি সর্বোত্তম হয়,তাহলে শরীর মোবারকের অবস্থা কি হতে পারে? এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।এ আক্বিদা চার মাযহাবের ইমামগণ ঐক্যবদ্বভাবে পোষণ করে থাকেন।এ আক্বিদার উপর চার মাযহাবের ইজমা প্রতিষ্ঠিত।সুতারাং রওজা মোবারক খানায়ে কা’বা ও আরশ মোয়াল্লা হতেও উত্তম।ইহাই আহলে সুন্নাতের আক্বিদা।এ সম্পর্কে অসংখ্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।


[মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া,৪র্থ খন্ড,৬০২ পৃষ্ঠা।কৃত: ইমাম কোস্তালানী (রহ:)]


(গ.) বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা আলুসী (রহঃ) বলেন,মাটির যে অংশটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ মুবারকের সাথে লেগে আছে,তা আসমান যমীনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান।এমনকি বলা হয় এবং আমিও বলি যে, রওযা শরীফ আল্লাহর আরশ থেকেও শ্রেষ্ঠ।”

[রেফারেন্সঃ রূহুল মা’আনীঃ৩/১১১]


(ঘ.) আল্লামা মুল্লা আলী কারী (রহ:) বলেন,মাটির যে অংশটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিসিম (শরীর) মুবারকের সাথে লেগে আছে,ইজমা এর ভিত্তিতে তা মক্কা মুকাররামাহ এমনকি আরশ থেকেও শ্রেষ্ঠ।

[মিরকাতুল মাফাতিহঃ ৬/১০, যারকানীঃ১২/২৩৪]


★৩. পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে


عَنِ  ابْنِ عُمَرَ،  قَالَ: قَالَ   رَسُولُ  اللَّهِ ﷺ : مَنْ زَارَقَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي (رواه الدار قطني و البيهقي)


উচ্চারণ:   ‘আন   ইবনে     উমারা    (রাদ্বিয়াল্লাহু    তা’আলা আনহু) ক্বালা,  ক্বালা রাসূলুল্লাহি ﷺ মান  যারা  ক্বাবরি, ওয়াজাবাত লাহু শাফায়াতি।


অনুবাদ:    হযরত  ইবনে ওমর    (রাদ্বিয়াল্লাহু   তা’আলা আনহু) থেকে   বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ   ﷺ  বলেছেন যে ব্যক্তি আঁমার রওজ্বা যিয়ারত  করল,তার জন্য সুপারিশ/শাফায়াত করা  আঁমার উপর ওয়াজিব হয়ে  গেল।


*****দলিল*****

*(ক.) সুনানে দারে কুত্বনী ২/২৭৮ হাঃ  ১৯৪

*(খ.) বায়হাকীঃকৃত শুয়াইবুল  ইমান   ৩/৪৯০ হাঃ  ৪১৫৯-৬০

*(গ.) ইমাম   হায়সামী কৃত মুজামুয যাওয়ায়েদ ৪/২

*(ঘ.) হাকীম তিরমিজি,নাওয়াদিরুল উসুল ২: ৬৭

*(ঙ.) জামে ছগীর,পৃষ্টা নং ১৭১

*(চ.) শিফাউস সিকাম,পৃষ্টা নং ২

*(ছ.) ওফাউল ওফা,পৃষ্টা নং ৩৯৪

*(জ.) আসান ফিকহ, পৃষ্ঠা ২৫০


এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (রহ:) লিখেছেন, উপরোল্লিখিত হাদীসটিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যিয়ারত জীবদ্দশায় ও পরবর্তী জীবনে উভয়টিকেই বোঝানো হয়েছে। তদ্রুপ যিয়ারতকারী কাছের হোক কিংবা দূরের,পুরুষ হোক বা মহিলা সবাইকে বোঝানো হয়েছে [হাশিয়া আলাল ঈজাহ ৪৮১]


✌অপরদিকে; হযরত উমর (রাঃ ) হতে বর্নিত আছে আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-বলেছেন: যারা আমার রওজা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত অবশ্যক হয়ে যাবে। ইমাম বাজ্জার (রাঃ) ইহা দুর্বল সনদে বর্ননা করেছেন।


[সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ,১২তম খন্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা]


★৪. হযরত ইবনে উমর(রাঃ) বলেনঃ রাসুল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ- যারা আঁমার রওজা জিয়ারত করবে অথবা বললেন যারা আঁমার যিয়ারত করবে আঁমি তার সুপারিশকারি বা সাক্ষি হবো।


******দলিল*****

*(ক.) মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালছী, হাদিস নং ৬৫

*(খ.) শুয়াইবুল ইমান,হাদিস নং ৩৮৫৭

*(গ.) সুনানে কুবরা লিল বায়হাক্বি, হাদিস নং ১০২৭৩


★৫. হযরত উমর (রাঃ) বলেনঃ- রাসুলে করিম (ﷺ) -আমাকে বলেছেনঃ- যে ব্যাক্তি আমার কাছে শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্য আসবে অন্য কোন উদ্দেশ্য নয়,তাহলে কিয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত কারি হওয়া আমার জন্য অবশ্যক হয়ে যাবে।


Comments

Popular posts from this blog

ছেমা ই দালালাত

ইউসুফে ছানি গাউছুল আজম ছৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা রহঃ জীবনী দর্পণ।

কোরআন সুন্নার আলোকে পীর ও মুরিদ।