কোরআন সুন্নার আলোকে পীর ও মুরিদ।



হক্কানী পীর-শায়েখ-আলেম-উলামাগণের নিকট বায়আত হওয়া নিয়ে যাদের চুলকানী আছে তাদের জন্য এই পোস্টটি ।
১ম প্রশ্নঃ- বায়াত বলতে কি বুঝায় ?
উত্তরঃ--------------
বাইয়াত আরবী শব্দ بَيْعٌ শব্দ থেকে গঠিত। بَيْعٌ অর্থ বেচা-কেনা, লেন-দেন, ক্রয়-বিক্রয়, তবে মূল অর্থ বিক্রয় করা। আনুগত্যের চুক্তি, আনুগত্যের শপথ, আনু্ষ্ঠানিক আনুগত্য। ইত্যাদি।আর ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় বাইয়াত হল আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি অর্জনের লক্ষ্যে নিজের জান ও মালকে ইসলামী জীবনযাত্রার দায়িত্বশীল ব্যক্তির বা হক্কানী পীরের আনুগত্যের শপথের মাধ্যমে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির নাম। শরয়ী পদ্ধতি অনুযায়ী হক্কানী পীর বা শায়েখের নিকট বাইয়াত হওয়া শুধু জায়েজই নয় বরং আবশ্যকও বটে।
২য় প্রশ্নঃ- পীর কি?
উত্তরঃ- পীর শব্দটি ফার্সি। শব্দগতভাবে এর অর্থ হল ‘জ্ঞানি’; ইসলামি পথ প্রদর্শক । মূলতঃ পীর হলো ঐ ব্যাক্তি; যিনি একজন কামেল ওলি বা শায়েখের হাতে বায়াত হয়ে, কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বা ওলি হয়েছেন ।পীর হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো আল্লাহর ওলি বা প্রিয় বান্দা হওয়া ।
 কুরআন শরীফ ও হাদিছ শরীফে যাদের আউলিয়া, মুর্শিদ ও শায়খ বলা হয়েছে, ফার্সিতে তাদের পীর সাহেব বলা হয়।
৩য় প্রশ্নঃ- কোরআনে কি পীর শব্দটি আছে?
উত্তর:- 
পীর শব্দটি পবিত্র কোরআন পাকে নেই। কারন পীর শব্দটি ফার্সি ভাষা হতে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে । যেমনঃ নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা, খোদা, ইত্যাদি শব্দগুলো কোরআন শরীফে-এ নেই। কারন উহা ফার্সি শব্দ, তবে এর প্রতিটি ফার্সি শব্দেরই প্রতিশব্দ কোরআন শরীফে আছে, যেমনঃ নামাজ-সালাত, রোজা-সাওম, ফিরিশ্তা-মালাকুন ইত্যাদি।
** আবার সালাত আরবি শব্দটি স্থান বিশেষ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অনুরূপ ভাবে পীর ফার্সি শব্দের প্রতিশব্দ পবিত্র কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করেছেন, যথাঃ ‘অলি’ বহুবচনে আউলিয়া, মুর্শিদ, উলিল আমার; ইমাম, বহুবচনে আইম্মা, হাদি, ছিদ্দিকিন, ইত্যাদি।

৪র্থ প্রশ্নঃ- মুরীদ শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ- মুরীদ হলো مريد – يريد – اراد আভিধানিক অর্থ ইচ্ছাপোষনকারী, সংকল্পকারী, আনুগত্য পোষন কারী। কুরআন ও হাদীস শরীফে মুরীদ হওয়ার বিষয়টি এসেছে بيعة “বায়আত” নামে।
৫ম প্রশ্নঃ- কোরআন-হাদিস নিজে নিজে পড়েই এবং তা অনুযায়ী আমল করেই তো আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা বা ওলি হতে পারি । তবে কেন আমরা কোন শায়েখ বা পীরের নিকট বায়াত হবো ?
উত্তরঃ-
কোরআন হাদিস সাহাবায়ে কেরামহগনের নিকট থাকা সত্তেও উনারা বিভন্ন সময় বিভন্ন বিষয়ে রাসূলﷺ  এর নিকট আনুগত্যের শপথ বা বায়াত হয়েছিলেন ।
যেমন; আল-কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন;“হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল, তারা আসলে আল্লাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল। তাদের হাতের উপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল।হে রাসূল! আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল ” (সূরা ফাতহ ; আয়াত ১৮)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বায়াত গ্রহণ কারীগণের স্বয়ং সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছেন। এই বায়াতের উপর আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কারণে এই বায়াতকে বায়াতে রিদওয়ান বলা হয়।"

অপর হাদিসে আছে :-
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦْ ﺩِﻳْﻨَﺎﺭٍ ‏(ﺭﺽ‏) ﺍَﻧَّﻪُ ﺳًﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦْ ﻋُﻤَﺮَ ‏(ﺭﺽ‏) ﻳُﻘَﻮْﻝُ ﻛُﻨَّﺎ
ﻧَﺒَﺎﻳِﻊْ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ‏( ﺻﻠﻌﻢ‏) ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻳَﻘًُﻮْﻝُ ﻟََﻨَﺎ ﻓِﻴْﻬَﺎ
ﺍِﺳْﺘَﻄَﻴْﻌْﺘُﻢْ ـ ‏(ﻣﺴﻠﻢ )
 আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা রাসূল (ﷺ  ) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতাম, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর এবং তিনি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী উক্ত আমল
করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)

প্রশ্ন বায়াত কত প্রকার ?
উত্তরঃ- 
বিভিন্ন প্রকার বায়আত রয়েছে । যেমন:-
(১)বায়াতে রাসূল (ﷺ  )
 (২)বায়াতে জিহাদ:-
 (৩ বায়াতে খেলাফত বা রাষ্ট্রীয় বায়াতঃ
(৪) বায়আতে হিজরত ।
 (৫) বায়াতে তাকওয়া:-
 আত্মশুদ্দি লাভের নিমিত্ত আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (ﷺ  ) সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাসিলের উদ্দেশ্যে কোন পীর –ওলি-শায়েখের হাতে তওবা এবং তাকওয়া অর্জনের ভিত্তিতে বায়াত গ্রহন করাই হলো বায়াতে তাকওয়া । বর্তমানে উক্ত বায়াত প্রথাই প্রচলিত রয়েছে । দ্বীনের উপর স্থির থেকে শরীয়ত সম্মত আমল করার ব্যাপারে শায়েখের নিকট আনুগত্য প্রকাশ বা শপথ গ্রহণ বা বায়াত হওয়াকেই বলা হয় বায়াতে তাকওয়া ।

প্রশ্নঃ বায়াতে তাকওয়া কি রাসূল (ﷺ  )  উনার সময় ছিলো?
উত্তরঃ-  হ্যাঁ; বায়আতে তাকওয়া রাসূল (ﷺ  )  এর সময়ও ছিলো ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক সূরা মুমতাহিনাহ-য় বলেন;“হে নবী যখন মুমিন নারীরা আপনার নিকট বায়াত হতে আসে যে; আল্লাহর সাথে তারা শরীক করবে না এবং চুরি করবে না, ব্যভিচারে লিপ্ত হবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আর জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা করবে না আর সৎ কাজে আপনার অবাধ্য হবে না তখন তাদের আনুগত্যের শপথ(বায়াত) গ্রহণ করুন” ।(সুরা মুমতাহিনাহ; আয়াত ১২)
কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে এখানে মুমিন নারীদের কথা বলা হয়েছে; পুরুষদের কথা বলা হয়নি ।
তাদের জন্য এই হাদিস খানা; “মুজাশি ইবন মাসউদ সুলামী রা: থেকে বর্নিত; তিনি বলেন,  আমি (মক্কা বিজয়ের পর) আমার ভাই আবু মা‘বাদ রা: কে নিয়ে রাসূলূল্লাহ (ﷺ  )  এর কাছে এলাম । তখন আমি বললাম , ইয় রাসূলাল্লাহ! আপনি তাকে হিজরতের বায়আত করান । তিনি তখন বললেন: হিজরত তার অধিবাসীদের সাথে অতিক্রান্ত হয়েছে । আমি বললাম, তা হলে এখন সে কিসের উপর বায়াআত হবে ? তিনি বললেন, ইসলাম, জিহাদ, ও ভালো কাজের ( শরীয়াত সম্মত আমলের) উপর বায়াত হতে পারে । (মুসলিম শরীফ; ৪৬৭৪ নং হাদিস )
উক্ত আয়াত ও হাদিসে বায়াতে তাকওয়ার কথা বলা হয়েছে । বর্তমানে পীর-শায়েখ-ওলি-আউলিয়া-হক্কানী আলেমগণ এই শর্ততে বায়াত করে থাকেন যে; তারা(মুরিদ) সকল প্রকার গুনাহ থেকে তওবা করলো এবং ভবিষ্যতে আর কোন প্রকার গুনাহ অর্থাৎ শরীয়ত বিরোধি কাজে লিপ্ত হবে না । সুতরাং দেখা যায় যে সাহাবায়ে কিরামগণ সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ  )  উনার কাছে বায়াত বা মুরীদ হয়েছেন । 
প্রশ্নঃ সাহাবায়ে কিরাম রা: উনারা কি বায়াত করেছেন?
উত্তরঃ- হ্যাঁ রাসূল সা: উনার পরবর্তীতে সাহাবায়ে কিরাম রা: উনারাও বায়াত করেছেন । সহীহ বুখারী ও মুসলিমদের বহু হাদিসে উল্লেখ আছে যে, রাসুল (ﷺ  )  সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সাহাবাগণকে বাইয়াত করাতেন এবং রাসুল (ﷺ  )  এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীন সাহাবাগণকে এবং সাহাবাগণ পরবর্তী তাবেঈনদেরকে বাইয়াত করাতেন। হযরত আববাদ ইবনে তামীম রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “হাররার ঘটনার দিন যখন লোকজন আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন তখন ইবনে জায়েদ রা. জিজ্ঞাসা করলেন ইবনে হানজালা রা. লোকদের কিসের উপর বাইয়াত গ্রহণ করছেন তখন তাকে বলা হল দ্বীনের উপর অটল থেকে মৃত্যুবরণ করার উপর বাইয়াত গ্রহণ করছেন” (বুখারী ৪১৬৭-১৯৫৯)।
প্রশ্নঃ রাসূল (ﷺ  )  উনার অবর্তমানে আলেম-উলামা বা খলিফার নিকট বায়াত হতে হবে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশ প্রদান করেছেন কি ?
উত্তরঃ হ্যাঁ; করেছেন । হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,“নবী করীম (ﷺ  )  এরশাদ করেছেন, বনী ইসরাইলের নবীগণ তাদের উম্মতগণকে শাসন করতেন এবং যখন কোন নবী ইন্তেকাল করতেন তখন আরেকজন তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোন নবী আসবে না। তবে অনেক খলিফা বা প্রতিনিধি হবে । সাহাবারা আরজ করলেন ইয়া রাসূল সা. আপনি আমাদের কি নির্দেশ করছেন। তিনি বললেন তোমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের বাইয়াতের হক আদায় করবে; তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ওই সব বিষয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন যার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পন করা হয়েছিল (সহীহ বুখারী ৩৪৫৫, মুসলিম ১৮৪২)।
অন্য হাদিসে রাসূল (ﷺ  )  বলেন, وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ،  - ‘আলেমগণ হ’লেন নবী-রাসূলগণের উত্তরাধিকারী বা প্রতিনিধি ।
[ ৩. তিরমিযী হা/২৬৮২; আবূদাঊদ হা/৩৬৪১; ইবনু মাজাহ হা/২২৩; মিশকাত হা/২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়, হাদীছ ছহীহ ]
সুতরাং হক্কানী আলেম উলামাগণের নিকট বায়াত হওয়া 100% জায়েজ এবং কোরআন সুন্নাহ সম্মত এবং বায়আত হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নাই; কারণ ইহা স্বয়ং রাসূল সাঃ এর আদেশ ।
প্রশ্নঃ বায়াত না হয়ে মারা গেলে কি হবে ? বা বায়াত না হয়ে যারা মারা গেলো তাদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে ?
উত্তরঃ- এক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ  )  এরশাদ করেন যে ব্যক্তি আমীর-খলিফা বা প্রতিনিধির ইতায়াত (আনুগত্য) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বের হয়ে মৃত্যুবরণ করল সে অবশ্যই জাহিলিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করল (সহিহ মুসলিম ৪৮৯২)।
ইমামুল মুসলিমিনের (আমীরের শায়েখ বা হক্কানী পীরের কাছে) বাইয়াত পূর্ণ করা অঙ্গীকারের অন্যতম অংশ এ জন্য বাইয়াত গ্রহণকারীর উচিত অঙ্গিকার পূর্ণ করার ওপর অবিচল ও সুদৃঢ় থাকা। এর থেকৈ বিচ্ছিন্ন থাকা কিংবা বিদ্রোহ করার সুযোগ কারো নেই। বহু সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ইমানের উপর মৃত্যু হওয়ার জন্য আমিরের বা হক্কানী পীরের হাতে আনুগত্যের (আল্লাহ পাকের হুকুম ও রাসুল স. এর সুন্নতের উপর অবিচল থাকার) বাইয়াত হওয়ার শর্ত অন্যথায় জাহিলিয়াতের উপর তার মৃত্যু হবে। হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল স. থেকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমীরের হাতে আনুগত্যের বাইয়াত হওয়া ব্যতিত মৃত্যুবরণ করল সে জাহিলিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করল (মুসলিম তাবরানী ২২৫)।

সুতরাং দেখা যায় যে; ইসলামের হুকুম আহকাম পালনের ব্যাপারে দৃঢ় থাকতে এবং তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকী হতে বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। এই বায়াতের ধারাবাহিকতা রাসূল সা: থেকে আরম্ভ হয়ে আজ অবধি চলছে; কিয়ামত পযর্ন্ত চলবে ইনশাআল্লাহ ।
প্রশ্নঃ হক্কানী পীর-শায়েখ-ওলি-আলেম-উলামা চিনবো কিভাবে?
উত্তরঃ হক্কানী পীর চিনার মাপকাঠি হলো কোরআন –সুন্নাহ ।
যে পীরের আকিদার মাঝে কুফরী বা শিরকি রয়েছে; তার ঈমান নেই ; সে কাফের-মুশরিক । তাদের নিকট বায়াত হওয়া যাবে না ।
কিন্তু যে পীরের আকিদা ঠিক আছে কিন্তু শরীয়তের আমল করে না; যেমন: নামাজ পড়ে না রোজা রাখে না; সুদ খায়; ঘুষ খায়; বেগানা মহিলা থেকে পর্দা পালন করে না; গান বাজনা করে; মদ-গাজা বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে; হালাল-হারামের পরোয়া করে না; এই জাতীয় পীর নিঃসন্দেহে ভন্ড-মানুষরূপী শয়তান-শয়তানের অনুসারী । এদের নিকটও বায়াত হওয়া যাবে না ।
হক্কানী পীরঃ- হক্কানী পীর ওলিগণ শরীয়তের পূর্ণ অনুসারী হবেন।  ওনারা জানা সত্বে একটা মোস্তাহাব আমলও ত্যাগ করেন না ।
হক্কানী পীর ওলিগণের দুনিয়া ও আখেরাতে কোন ভয় বা চিন্তা নেই । এই প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেন; “ নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের (আওলিয়া) কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। তারা এমন লোক যারা ইমান এনেছে এবং পরহেজগারী অবলম্বন করেছে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থীব জীবনে এবং আখিরাতের আল্লাহর বানী সমূহের কোন পরিবর্তন নেই এটাই বিরাট সফলতা (সূরা ইউনুস ৬২, ৫৩৬৪)।
প্রশ্নঃ- হক্কানী পীর-ওলির বিরোধিতা করলে কি হবে ?
উত্তরঃ-পীর ওলিদের সাথে শত্রুতা রাখা আল্লাহর সাথে যুদ্ধের শামিল বলা হয়েছে। যেমন- আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসুল(ﷺ  )  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা রাখবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি” (সহিহ বুখারী ৬৫০২)।
সুতরাং দেখা যায় যে; শায়েখ বা আলেম উলামার –ওলির নিকট বায়আত হওয়া শরীয়তের আবশ্যকীয় বিধানের মধ্যে অন্যতম । সুতরাং হক্কানী পীর-ওলিল আমরের নিকট বায়আত হয়ে আল্লাহ পাক ও উনার রাসূল (ﷺ  )  উনাদের সন্তুষ্টি মোবারক হাসিল করার তৌফিক আমাদের সবাইকে আল্লাহ পাক দান করুক । আমিন আমিন আমিন ।

১)পীর শব্দটি ফার্সি; অর্থ : শায়খ, বৃদ্ধ, পুরাতন।
২)মুরিদ শব্দটি আরবি। মুরিদ শব্দটি বাবে ( ﺍﻓﻌﺎﻝ ) হতে (اسم ﻓﺎﻋل ) এর রুপান্তর। আরবি গ্রামার অনুযায়ী বাবে ইফআল
হতে ইসমে ফায়েল'-এর রুপান্তর মুরিআসে।
শাব্দিক অর্থ : ইচ্ছা পোষনকারী, দৃঢ় প্রত্যয়ী, সংকল্পকারী ! পরিভাষায় পীর বলা হয়, কোরআন সুন্নাহের আলোকে সৎপথের দিশারী এমন বিজ্ঞ আল্লাহর ওলীকে মানুষ যার হাতে নিজেকে সেচ্ছায় অর্পণ করে নিজের ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। যিনি নিজেকে পীরের কাছে অর্পন করেন তাকে মুরিদ বলা হয়। অর্থাৎ সে নিজের আত্মশুদ্ধির জন্য একজন শায়খ,কামেল বুজুর্গ ও আল্লাহর ওলির হাতে অর্পণ করার সংকল্প-ইচ্ছা করেছে।
৩) বায়আত শব্দটি ﺑﺎﻋﻴﺒﻴﻌﺒﻴﻌﺎ এর- মাসদার। ( ﺑﻴﻌﺔ - এর শেষে আরবীতে গোল ﺓ আর উর্দুতে লম্বা ﺕলাগানো হয়।) বায়আত ( ﺑﻴﻌﺖ ) অর্থ : বিক্রি করা, বেচা। পরিভাষায় :- নিজেক আগ্রহ সহকারে সেচ্ছায় আল্লাহর হাতে জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রি করা।
৪)বায়আতে সুলুক নফল আমল করে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা অর্জন করার জন্য বায়াআত করা হয়। বিশেষ দ্রঃ আরবীতে পীরকে শায়খ ( ﺍﻟﺸﻴﺦ ) ও সালেক ( ﺍﻟﺴﺎﻟﻚ ) বলা হয়। এই পদ্ধতিকে (পীরের হাতে নিজেকে অর্পন করা তথা বায়আত হওয়া নিজের ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে ) বায়আতে সুলুক বলা হয়।
❥ বায়আতে সুলুক সম্পর্কে মতবাদ । পৃথিবীতে 'বায়আতে সুলুক সম্পর্কে ভিন্ন ধরনের মতবাদ পাওয়া যায়।
১/ - গায়রে মুকাল্লিদ, সালাফি, নাজদী ও মওদূদীবাদী ভাইদের নিকট "বায়আতে সুলুক ভিত্তিহীন। তারা বলেন তার কোনো প্রমাণ্যতা ও অস্তিত্ব ইসলামে নেই !!!

২/ - আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অনুসারী যারা তারা বলেনঃ "বায়আতে সুলুক" কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। পরকালীন নাজাত বিশুদ্ধ ঈমান এবংনেক আমলের জন্য ।
✔ বায়আতে সুলুক এর ফায়দা।
বায়আতে সুলুক এর অনেক ফায়দা রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি বড় ফায়েদা উল্লেখ করা হলোঃ-
১- 'বায়আত' নফল আমল সমুহে আধিক্য এবং তার মাধ্যমে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা অর্জন করার মাধ্যম। মানুষ তো নফল আমল নিজেই করতে পারে কিন্তু অভিজ্ঞতা ও তাজরেবা হলো তা কামিয়াব বা সফল হয় না। কিন্তু যখন নিজের অন্যের কাছে সমর্পণ- হাওয়ালা করে দেয় তো এই উদ্দ্যেশ্য-মাকসাদ সহজেই অর্জন হয়।

২- বাতেনী জিন্দেগী পরিস্কার করা যায়। যেভাবে আমাদের বাহ্যিক ময়লা হয় এবং তা পরিস্কার করতে হয়, তেমনি ভাবে আমাদের অভ্যন্তরীণ ময়লা হয় এবং তা পরিস্কার করাও আবশ্যক হয়। বাতেনী বা অভ্যন্তরীণ ময়লা হলো দুশ্চরিত্র, নৈতিকতা অবক্ষয়; যা পরিস্কার করা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আরোপিত ফরজ ছিলো। সুরায়ে বাকারার ১২৯ নং ও সুরায়ে জুমআর ২নং আয়াতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আরোপিত চারটি ফরজ বয়ান করা হয়েছ ( সূরা আল জুমুআহ : ২ - তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজনরসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াত সমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোরপথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।)

( সূরা আল বাক্বারাহ : ১২৯ - হে পরওয়ারদেগার!তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা।)

☞ আয়াতে ( ﻭﻳﺰﻛﻴﻬﻢ ) বাক্য আছে। আর ﻭﻳﺰﻛﻴﻬﻢঅর্থাৎ মুসলমানদের বাতেনী বা অভ্যন্তরীণকে ( জিন্দেগী, চারিত্রিক অবক্ষয় ইত্যাদি থেকে) পবিত্র ওপরিস্কার করা এবং উন্নত চরিত্র দ্বারা আলোকিত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেওয়ার জন্যে । এই উদ্দ্যেশ্যও বায়আত দ্বারা অর্জিত হয়।
✔ কোরআন শরীফ এর আলোকে বায়আতে সুলুক - এর প্রমাণ্যতা -
কোরআন শরীফের অনেক আয়াত দ্বারা বায়আতে সুলুক বা পীর- মুরিদী প্রমাণিত। সুরা আল-মুমতাহিনা : আয়াত নং :১২ হে নবী ! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে আসে বায়আত হতে এই শর্তে (আনুগত্যের শপথ করে) যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না,জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের বায়আত করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।
☞ এই আয়াতে বায়আতের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
এখানে বায়আত দ্বারা "বায়আতে সুলুক "(যাকে আমাদের ভাষায় পীর-মুরিদী বলে থাকি। অর্থাৎ নিজের আত্মশুদ্ধির জন্য পীর বা শায়খ এর হাতে বায়আত হওয়া।) উদ্দেশ্য। "বায়আত আলাল জিহাদ" উদ্দ্যেশ্য নয় । সাহাবীরা মু'মিন হওয়া সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বায়আতগ্রহন করতেন নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্য। জীবনের চলার পথে কোথাও ত্রুটি হচ্ছে কিনা, কিভাবে চললে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামখুশী? এই পথের সঠিক দিশারী রাসূলুল্লাহর হাতে তারা বায়আত হতেন।
_সুরা আল-ফাতহ, আয়াত নং ১০ যারা আপনার কাছে বায়আত হয় (আনুগত্যের শপথ করে), তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহ তা'য়ালার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ তা'য়ালা সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।
☞এই আয়াতেও স্পষ্টভাবে বায়আতের কথা উল্লেখ রয়েছে । আরো অনেক আয়াত রয়েছে যে আয়াতে "বায়আতে সুলুক" আমাদের ভাষায় পীর- মুরিদী উদ্দ্যেশ্য। অর্থাৎ নিজের ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহওয়ালা-বুজুর্গদের কাছে বায়আত হওয়া উদ্দ্যেশ্য।
✔ হাদীস শরীফ দ্বারা "বায়আতে সুলুক"-এর প্রমাণ__
" বায়আতে সুলুক " অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বুখারী শরীফ থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করছি হযরত আবুল ইয়ামান আবু ইদ্রিস আয়িযুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পার্শ্বে সাহাবাদের উপস্থিতিতে (সাহাবাদেরকে লক্ষ করে) বলেনঃ আমার নিকটবায়আত গ্রহণ কর এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ তা'য়ালার সাথে কিছু শরিক করবেনা, চুরি করবেনা, যিনা-ব্যাভিচার করবেনা, সন্তানদের হত্যা করবেনা, মিথ্যা অপবাদ দিবে না, সৎকাজে নাফরমানী করবেনা। তোমাদেরই মাঝে যে তা পূর্ণ করবে তার পুরুস্কার আল্লাহ তা'য়ালার নিকট রয়েছে। আর যে এর কোন একটিতে লিপ্ত হলে হয়ত তাকে দুনিয়াতেই শাস্তি দেওয়া হবে; তখন তা হবে তার কাফফারা সরূপ। কেহ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হলে অতপর আল্লাহ তা'য়ালা তা গোপন রাখেন তাহলে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন, ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন। (সাহাবায়ে কেরাম বলেনঃ-) অতপর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বায়আত হলাম। ((বুখারী শরীফ ১/৭কিতাবুল ঈমান))
এই হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বায়আতে সুলুক উল্লেখ আছে।এরকম অসংখ্য হাদীস আছে যেখানে বায়আতে সুলুকের কথা স্পস্টত উল্লেখ আছে। বায়আতে সুলুক বা পীর মুরিদী অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
যে সকল অজ্ঞ-মুর্খ জাহেলরা বলে ইসলামে কোনো পীর মুরিদী নেই, কোরআন হাদীসে কোনো পীর- মুরিদী নেই তারা কি এই আয়াত- হাদীস সমূহ দেখেনা? দেখবে কিভাবে? তাদের না আছে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান, না আছে কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে যথেষ্ট ওসঠিক জ্ঞান।
জাহেলরা ভ্রান্ত লেখকদের কয়েকটি বাংলা ইংলিশ বইপড়েই মনে করে অনেক বড় জ্ঞানী হয়ে গেছে। শুরু করে উল্টাপাল্টা ফতোয়া দান। আসলে তারা তো বাতিল শক্তি, তাদের কাজই হলো মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো। মিথ্যাচার করে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করা। সকল শ্রেণীর মুসলমান ভাই বিশেষকরে যুবক শ্রেনীর ভাইদেরকে বলবো আপনারা মওদুদীবাদী, কাদিয়ানী, শিয়া, আহলে হাদীস এসকল ভ্রান্ত ফিৎনা ফিরকা হতে দূরে থাকবেন; এদের কোনোকথায় কান দিবেন না।
আপনারা সব সময় উলামায়ে কেরামের নিকট যাবেন।দ্বীনকে সঠিকভাবে বুঝার চেষ্টা করবেন। কারণ:- উলামায়ে কেরামই কোরআন ও হাদিসের সঠিক জ্ঞান রাখেন। হ্যাঁ আর যারা বাতিল ফিরকা তারা এই আয়াত ও হাদীস মানবেনা। কারণ তাদের উদ্দেশ্য ইসলাম নয় বরং তাদের উদ্দেশ্য (ফিৎনা) ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে মুসলমানদের ঈমান- আমল নষ্ট করা ।
পৃথিবীতে এমন কোন অলি আল্লাহ বা পীর নেই যিনি বায়াত গ্রহণ ছাড়া কামেল অলি হয়েছেন। এমন কি শেখ ফরিদ উদ্দিন চিশতী (র:) ৩৬ বৎসর এবাদত বন্দেগী করেও হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী (রহ:) এর নিকট বায়াত গ্রহণ পূর্বক ২৪ বৎসর তার খেদমত করে কামেল অলি হয়েছেন। যদি বায়াত গ্রহণ ছাড়া চলতো তবে তার মতো লোকের তো আর পীর ধরার দরকার ছিল না। কাজেই বায়াত গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য জগত শ্রেষ্ঠ মাওলানা রুমী (রহ:) বলেছেন : - " এক জামানা ছোহবতে বা আউলিয়া বেহেতর ছদসালে তায়াতে বেরিয়া"। অর্থাৎ কিছুকাল কোন অলির সহিত বসা ১০০ বৎসর বেরিয়া এবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনি আরো বলেছেন যে আমি যত বড় পুথিগত বিদ্যা হই না কেন যে পর্যন্ত শামশের তাবরেজী (রহ:) এর কম্বলের নীচে না গিয়েছি সে পর্যন্ত আমি জ্ঞান অর্জন করতে পারি নাই। কম্বলের নিচে যাওয়া মানে বায়াত গ্রহণ করা।
" সিয়ারুল আসরার" কিতাবে হযরত বড়পীর (রহ:) সাহেব লিখেছেন-"কলব জিন্দা করার জন্য পীর বা আহলুত তালকীন অন্বেষণ করা ফরয। হযরত মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি (র:) বলেছেন-"আল ফেকাউ লে ছালাহির জাহেরে আল তাসাউফ লে এছলাছির বাতেনে"। অর্থাৎ ফেকাহ শাস্ত্র মানুষের শরীয়তকে শুদ্ধ করে আর তাসাউফ মানুষের অন্তরকে পরিস্কার করে। মাওলানা রুমী (রহ:) বলেছেন - "কোনবীয়ে ওয়াক্ত খেসাশত আয় মুরিদ তাকে নুরে নবী আমাপদীদ" অর্থাৎ তোমার পীরকে জামানার নবী মনে কর। তিনি আরো বলেছেন : " খোদ-ব-খোদ কামেল না-শোদ মাওলানায়ে রুম-তা-গোলামে শামসের তাবরেজী না-শোদ" অর্থাৎ আমি কখনো নিজে কামেল হতে পারি নাই যতক্ষণ না আমি শামশের তাবরেজীর গোলাম হয়েছি।
হযরত হাফেজ সিরাজী (রহ:) বলেছেন-" বকোয়ে এশক সানেহ বে-দলীল রাহকদম কেমান বখশ নমুদাম ছদ এহতেশাম না-শোদ" অর্থাৎ পথ প্রদর্শক পীর ছাড়া এশকের গলীতে পা রেখো না কারণ আমি শত চেষ্টা করেও কিছুই হইনি। হাফেজ (র:) বহুকাল নিজে নিজে বহু চেষ্টা করেও কিছুই হাছেল করতে পারেননি। অবশেষে পীরের ওছিলায় দুই বৎসর সাধনায় মারফতের অশেষ দান লাভ করেন। এলমে জাহের ও এলমে বাতেন উভয়ের মধ্যে এরুপ সমন্ধ যেমন একটি দেহ ও অপরটি রুহ। রুহ ছাড়া যেমন দেহ বাচে না তেমনি দেহ ছাড়া রুহ খাকে না।
কোনো শয়ের বলেছেন :- " একভি আগর তরকহো তুজছে হাবীব! তো উঠে শাহেশর মে আমা বে নছীব" অর্থাৎ শরীয়ত এ মারেফত এই দুইটি এলমের একটিও যদি ত্যাগ কর তবে কেয়ামতের দিন অন্ধ হয়ে উঠবে।
মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ:)।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ আক্বিদা বুঝার এবং বাতিল আক্বিদাকে প্রত্যাখান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ছেমা ই দালালাত

ইউসুফে ছানি গাউছুল আজম ছৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা রহঃ জীবনী দর্পণ।