ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা গাজী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) জীবন দর্শন।
ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা গাজী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) জীবন দর্শন।
--------------মোহাম্মদ সুফি ওসমান গনি
বার আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার অন্তর্গত মেখল নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সৈয়দ পরিবারে ১৩২৩ হিজরী, ১৩১৩ বাংলা এবং ১৯০৬ ইংরেজীতে এক শুভ মুহূর্তে মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা গাজী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) জম্মগ্রহণ করেন।
কারামতে গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক. ও গাউছুল আযম মাওলায়ে রহমান বাবাভান্ডারী ক.
হুযুর গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক.'র দোয়ার বরকত নেক সন্তান লাভ এবং আশেকে রাসুল ﷺ'র জন্মের(শেরে বাংলা রহ.) ভবিষ্যতবাণী!
কারামত নং- ০৭
হযরত আমিনুল হক ফরহাদাবাদী রহ. বলেন:
হযরত আজিজুল হক শেরে বাংলা রহ.'র পিতা যখনই অসুস্থ হতেন, তখন হুযুর গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক.'র দরবারে দোয়ার দরখাস্ত নিয়ে হাজির হতেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করতেন, শেরে বাংলা রহ.'র পিতার ভাষ্যমতে যখন হুযুর গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক. তাকে দেখতেন, তখন উনার ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি লেগে থাকতো। একদিন শেরে বাংলা রহ.'র পিতা একদিন হুযুর গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক.'র নিকট হাদিয়াসহ উপস্থিত হয়ে আরজ করেন, "আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, আপনি দোয়া করুন যাতে আল্লাহ তাকে দ্বীনের খেদমতে কবুল করেন।" হুযুর গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক. কিছুক্ষণ চুপ থেকে খোদার দরবারে দুইহাত তুলে দোয়া করলেন এবং আমার সঙ্গে আনা আনারের একটি আমার হাতে তুলে দিয়ে আমার স্ত্রীকে খাইয়ে দিতে বললেন। শেরে বাংলা রহ.'র পিতা আনারটি নিয়ে যখন হযরতের পুকুর পাড় দিয়ে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন আমাকে (হযরত আমিনুল হক ফরহাদাবাদী রহ.) ইশারা দিয়ে হযরত কিবলা বলেন,
"অচিরেই চাঁটগাঁমের জমিনে এক আশেকে রাসুল ﷺ আসবেন, তাঁর নাম হবে আরবী অক্ষর "আইন" দিয়ে! বাতেলদের জন্যে সে হবে শাণিত তলোয়ার! সে আমার বাবাভান্ডারী ক.'র খলিফা হবেন। তাঁকে তোমার জীবদ্দশায় পেয়ে গেলে ইজ্জত করিও।"
হুযুর গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক.'র ওফাত শরীফের পর উনার করা ভবিষ্যতবাণী সত্য প্রমাণিত হলো। হযরত আজিজুল হক শেরে বাংলা রহ.'র বয়স তখন পাঁচ কি ছয় বছর, ছোটবেলা থেকে হযরত আজিজুল হক শেরে বাংলা রহ. উনার পিতার সাথে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ আসতেন, উনার পিতা উনাকে নিয়ে হযরত কিবলার রওজা যেয়ারতে দাঁড়ালে ছোট আজিজুল হক শেরে বাংলা রহ. এক দৌঁড়ে বাবাভান্ডারী ক'র হুজরা শরীফের দিকে চলে যেতেন, তখন তাঁকে দেখে হুযুর গাউছুল আযম মাওলায়ে রহমান বাবাভান্ডারী ক. উনার চাদর মোবারক খুলে ফেলতেন এবং শত আশেকভক্তদের রেখে হুযুর শেরে বাংলা রহ.'র দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ভাবে হাসি দিতেন!
(তথ্য সূত্র: দরবারে গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী জীবনী ও কারামত পৃষ্ঠা -৩১২।)
তাঁর পিতার নাম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আব্দুল হামিদ আলকাদেরী (রহ.)। শেরে বাংলা (রহ.) বাল্যকাল থেকেই অতি মেধাবী ও সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শৈশবকালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা আপন পিতার নিকট লাভ করেন অতঃপর তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা-এ-মঈনু ল ইসলামে ভর্তি হন। ঐ মাদ্রাসা দেওবন্দী কওমি নিয়ন্ত্রিত হলেও তৎকালে কয়েকজন সুন্নী আক্বীদার আলেমও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন কালে দেওয়ান নগর নিবাসী প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (রহ.) কে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে লাভ করেছিলেন। অতঃপর তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য হিন্দুস্থানে গমন করেন। দিল্লীর বিখ্যাত ফতেহ্পুর আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবী, উর্দু, ফার্সি ভাষার লিখিত বিভিন্ন শাস্ত্রে উপর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বুৎপত্তি অর্জন করেন। উক্ত মাদ্রাসার পিন্সিপ্যাল শেরে বাংলা (রহ.) এর মেধাশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁর খরচ বহন করার ঘোষণা দেন। অতঃপর হিন্দুস্থান থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের খেদমতে নিয়োজিত হন। তিনি হাটহাজারী এমদাদুল উলুম আজিজিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা ও রাউজান, রাঙ্গুনিয়া সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রাজকীয় গ্র্যাণ্ডমু ফতী কর্তৃক“ শেরে ইসলাম“ ওশেরে বাংলা” উপাধি লাভ ১৯৫৭ সালে মোজাদ্দেদে দ্বীনও মিল্লাত, শামসুল মোনাজেরীন, তাজুল ওলামা হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) দ্বিতীয় বার পবিত্র হজ্ব পালন উপলক্ষে সৌদি আরব গমন করেন । ইতিমধ্যে হাটহাজারী ওহাবীরা হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘কাদেরী (রহঃ) কেহেয় প্রতিপন্ন ও অপদস্থ করার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ।.তারা তাদের বন্দু বরও পৃষ্ঠ পোষক সৌদি সরকার র্পূবাহেু চিঠির মাধ্যমে হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘কাদেরী (রহঃ) এর সৌদি আরব গমন সম্পর্কে অবহিত করে এবং সৌদি কর্তৃপদেয় যে,এই লোক মুসলমানদেরকে কাফের বলে ।.সুতরাং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হোক। নির্ধারিত দিনে নির্তিষ্ট সময়ে হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুলহক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) এয়ারপোর্ট থেকে জেদ্দা পৌঁছার পূর্বেই সৌদি পুলিশ তাঁকে এরেষ্ট করে । ২, পুলিশ জানায় ,” আপনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে । হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) দৃঢ় কণ্ঠে তাদের কে বলেন, হজ্বে বায়তুল্লাহ ও মদীনায় হাযিরা দিতে এসেছি।’’ অতঃপর হুজুরকে সৌদি সরকারের গ্র্যাণ্ড মুফতী সৈয়দ আলবী সাহেবের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। গ্র্যাণ্ড মুফতী হুজুরকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সৈয়দ আজিজুল হকশেরে বাংলা ? ’’ হযরত শেরে বাংলা (রহঃ) হ্যাঁ সুচক জবাব দিলেন । মুফতী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,’’ আপনি কি মু’মিন মুসলমানদের কাফের বলেন?” হযরত শেরে বাংলা (রহঃ) তীক্ষ্ন কণ্ঠে জবাব দিলেন, আমি তো মু’মিন মুসলমান দের কাফের বলিনা। কিন্তু কিছু কিছু মুসলমান নামধরী লোককে কাফের বলি। যারা তাদের কিতাবে কুফ‘রী কালাম লিখেছে ।” উদাহরণ স্বরুপে তিনি কিতাবের উদ্ধৃতি সহকারে‘ আল্লাহ মিথ্যা কথা বলতে পারেন’ নাউযুবিল্লাহ ‘-ইত্যাদি ইত্যাদি ও হাবীদের বিভিন্ন জঘন্য ও কুফরী উক্তির উল্লেক করলেন।.এতে মুফতী সাহেব প্রমাণ জানতে চাইলেন। হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘কাদেরী (রহঃ) তাঁর সাথে বহন কৃত ওহাবীদের লেখা বিভিন্ন কিতাব খুলে প্রমাণ উপস্থাপন করলেন। অতঃপর হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) এর সাথে এ সমস্ত আক্বীদা বিষয়ক মাসায়েল নিয়ে উক্ত গ্র্যাণ্ড মুফতী সাহেবের সাথে দীর্ঘ ক্ষণ বাহাছ হয় ।হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) এ সমস্ত কুফরী কালামের বিরুদ্ধে এবং সঠিক আক্বীদা উপর সার গর্ভ যুক্তি প্রদর্শন করেন। হুজুরের সাহসিকতা পূর্ণ অসীম জ্ঞানের কাছে মুফতী সাহেব সম্পূণ পর্যুদস্থ ও পরাজিতহন।. ৩, হুজুরের বিরুদ্ধে উতো পূর্বে গৃহীত সমস্ত ওয়ারেণট প্রত্যাহার করা হয় এবং তাঁকে সসম্মানে হজ্ব পালন করার অনুমতি প্রদান করা হয় । হজ্ব সমাপনের পর হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আলকাদেরী (রহঃ) জিয়ারতে মদিনার উদ্দেশ্যে মদিনা মোনায়ারা পৌঁছেন।. হায়াতুন্নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন (দঃ) এর পবিত্র জেয়ারত লাভে ধন্য হলেন ।অতঃপর সাহাবায়ে কেরামের মাজার জেয়ারত শেষে হুজুর পাক (দঃ) এর রওজা পাকের পার্শ্বে এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জেয়ারত শুরু করলেন যেখানে কোন কবর শরীফ নেই বলে কর্তব্যরত সৌদি পুলিশরা বিশ্বাস করেন। তাই কর্তব্যরত পুলিশ হুজুরকে জিজ্ঞেস করলেন,’’ এই স্থানে তো কোন কবর নেই। আপনি কার কবর জেয়ারত করছেন? হুজুর উওর দিলেন,’’ হযরত ফাতেমাতুজ‘ জোহরা (রাঃ) এর মাজার জেয়ারত করছি ।’’ পুলিশ বাহিনী আশ্চর্যান্বিত হয়ে জানতে চাইলেন,’ ’এ দাবীর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ আছে কি?’’ হুজুর দীপ্ত কণ্ঠে বললেন,” হ্যাঁ অবশ্যই আছে। পুলিশ বাহিনী বললেন,” তাহলে আপনি আমাদের সাথে হুকুমতে চলুন।.’’ অতঃপর সৌদি পুলিশ হুজুরকে সৌদি সরকারের স্থানীয় মুফতী বৃন্দের কাছে নিয়ে যান হুজুর তাঁদের নিকট দলিল সহকারে প্রমাণ উপস্থাপন করেন । তাঁরা হুজুরের অকাট্য যুক্তি-তর্কের কাছে হার মানতে বাধ্য হন। অবশেষে পূর্বে উল্লেখিত সৌদি সরকারের রাজকীয় গ্র্যাণ্ড মুফতী সৈয়দ আলবী সাহেবকে তর্কে অংশ গ্রহণ করার জন্য আহবান করে আনা হয়। ৪, হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘কাদেরী (রহঃ) এর উদ্ধৃতি মতে মিশরের আল‘ আজহার বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থগার সংরক্ষিত রেফারেণ্স গ্রন্থখানি সৌদি সরকারী লাইব্রেরী থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়। হুজুর উক্ত কিতাব থেকে দলিল ও প্রমাণ উপস্থাপন করলেন। অবশেষে মুফতী সাহেব হুজুরের অগাধ পাণ্ডিত্য পূর্ণজ্ঞান ও যুক্তির নিকট সম্পূর্ণ পরাজিত হলেন। অতঃপর উক্ত গ্র্যাণ্ড মুফতী সাহেব হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘কাদেরী (রহঃ) কে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে অসীম জ্ঞানের স্বীকৃতি স্বরুপ’ শেরে ইসলাম’ ওরফে শেরে বাংলা’ উপাধিতে ভূষিত করে লিখিত সনদ পত্র প্রদান করেন। হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘কাদেরী (রহঃ) কে সৌদি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আগত বিশেষ অতিথি বৃন্দের সম্মানে আয়োজিত সভায় রাজকীয় মেহমান হিসেবে দাওয়াত প্রদান করা হয়। উক্ত সম্বর্ধনা সভায় সৌদি সরকার স্বয়ং উপস্থিত থাকেন। তা ছাড়া সৌদি সরকারের উচ্চ পদস্থ সম্মনিত ব্যক্তিবর্গ ও উপস্থিত থাকেন। সভায় বাদশাহ‘ আগমন করার সাথে সাথে সবায় দাঁড়িয়ে বাদশাহ‘ কে সম্মান জানালে কিন্তু হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন। তিরি প্রশ্ন উথ্তাপন করলেন,” আপনাদের আক্বীদা অনুযায়ী কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো বেদআতও শির‘ক। ” অতঃপর তিনি ওহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব লিখিত ‘কিতাবুত তাওহীদ’ থেকে সরাসরি প্রমাণ উপস্থাপন করেবলেন,” অতএব বাদশাহ‘র সম্মানে দাঁড়িয়ে আপনারা বেদআত ও কঠিন গোনাহ‘ র কাজ করেছেন।” এতে উপস্থিত গ্র্যাণড মুফতী ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ আলেম গণ কোন উত্তর দিতে পারলেন না। .তাঁরা সকলে এখানেও পরাজিত হতে বাধ্য হলেন এবং অকুণ্ঠচিত্তে হুজুরের অগাধ জ্ঞান ওপাণ্ডিত্যের ভূয়সী প্রশংসা করলেন.উক্ত সম্বর্ধনা সভায় সৌদি বাদশাহ‘ হুজুরের অসাধারণ জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপহার স্বরুপ মূল্যবান পাহড়ি ওছড়ি প্রদান করে বিশেষ রাজকীয় মেহমান হিসেবে হুজুরকে অভিনন্দন ও সম্মন জানালেন। শুধু তাই নয় রাজকীয় মেহমান হিসেবে সসম্মানে বিদায় জানানোর কালে তিনি ভবিষ্যতে যতবার হজ্ব করতে আসতে চান তার অগ্রিম অনুমতি নামা প্রদান করা হয়। (সুবহানাল্লাহ)
বায়াতগ্রহণ ও খেলাফত লাভঃ
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের প্রাক্তন খতীব ও সংস্কারক আল্লামা গাজী সৈয়দ আব্দুল হামিদ বাগদাদী (রহঃ)’র কাছে সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক বায়াত গ্রহণ করেন। তিনি শাহ্সূফী সৈয়দ আব্দুল হামিদ বাগদাদী (রহঃ)’র কাছ থেকে বেলায়তের সর্বোচ্চ খেলাফত লাভ করেন এবং খলিফায়ে আজম বা প্রধান খলিফা হিসেবে অভিষিক্ত হন।
হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) একজন যোগ্যতাসম্পন্ন পীরে কামেল হওয়া সত্ত্বেও নিজের দিকে আকৃষ্ট না করে পীরে তরীক্বত পেশওয়ায়ে আহ‘লে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বরী সৈয়দ আহম্মদ শাহ‘ ছিরোকোটি (রহঃ) এর কাছে বায়াত হওয়ার জন্য সুন্নি জনসাধারণকে প্রকাশ্যে উদ্বুদ্ব করেন।কারণ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়,তখন সুন্নী জমাতের”পাওয়ার ষ্টেশন“বা মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ)।তিনি ছিলেন সুন্নী জনতার নিয়ন্ত্রক ও নয়নমণি ।সবাই তাঁর কথা ও পরামর্শ বিনাদ্বিধায় মেনে চলতেন।সুতরাং তাঁর অনুমতি ও সমর্থন ছাড়া কোন পীরে কামেলের কার্যক্রম পরিচালিত করা সম্ভবপর ছিল না।তিনি অকুণ্ঠচিত্তে সকলকে পরামর্শ দিতে লাগলেন,”চট্টলার গৌরব সৌভাগ্যের পরশমণি পীরে তরীক্বত পেশওয়ায়ে আহ‘লে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বরী সৈয়দ আহম্মদ শাহ‘ ছিরোকোটি (রহঃ) প্রকাশ পেশোয়ারী ছাহেবের কাছে তোমরা বায়াত হও।তাঁর ছিলছিলাতে কোন সন্দেহযুক্ত ব্যক্তি নেই।তাঁর দামান নাজাতের উছিলা।শুধু তাই নয়, পীরে তরীক্বত পেশওয়ায়ে আহ‘লে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বরী সৈয়দ আহম্মদ শাহ‘ ছিরোকোটি (রহঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান”জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া “প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ও ছিল হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) এর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) ই পীরে তরীক্বত পেশওয়ায়ে আহ‘লে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বরী সৈয়দ আহম্মদ শাহ‘ ছিরোকোটি (রহঃ) কে মাদ্রসা প্রতিষ্ঠা করার পরামর্শ প্রদান করেন।তিনি তাঁকে বলেন,”আপনার বর্তমানে আপনার মুরিদগণ বিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।তাদেরকে একতাবদ্ব করে রাখার জন্য আপনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করুন।এমনকি পরবতীতে তাঁর বিশিষ্ট মরিদানকে নিয়ে এই মাদ্রাসার জমি ও হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) পছন্দ করেন এবং ক্রয় করার ব্যবস্থা করে দেন।
১৯৫৪ ইংরেজীতে এই মাদ্রাসার যখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় তখন হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।ইমামে আহ‘লে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব কাজী মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী ছাহেব এ ঘটনার প্রত্যক্ষদশী।তিনিও ভিত্তি প্রস্তরের সময় হাজির ছিলেন।এক্ষণ আমরা হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) সম্পর্কে পীরে তরীক্বত পেশওয়ায়ে আহ‘লে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বরী সৈয়দ আহম্মদ শাহ‘ ছিরোকোটি (রহঃ) এর ঐতিহাসিক বাণী বিবৃত করব। ছিলেন।ইমামে আহ‘লে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব কাজী মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী ছাহেব বলেন যে,এই বাণীসমূহ পীরে তরীক্বত পেশওয়ায়ে আহ‘লে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বরী সৈয়দ আহম্মদ শাহ‘ ছিরোকোটি (রহঃ) অনেকবার নিজের জবানে পাকে বয়ান করেছেন এবং বিশেষতঃ মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের দিন হযরত শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী (রহঃ) এর দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর মুরিদগণ এই কথাগুলি বলেছিলেন।
মোজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, ইমামে আহলে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) আমার শ্রদ্বেয় পিতা হযরত মাওলানা সৈয়দ বিসমিল্লাহ শাহ্ (রহঃ) কে সাথে নিয়ে আমার দাদাজান কেবলা হযরত মাওলানা শাহ্সূফী সৈয়দ রাহাতুল্লাহ্ নকশবন্দী (রহঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফে প্রবেশ করেন।
অতঃপর হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) এর নির্দেষক্রমে মাজার শরীফের অভ্যন্তর থেকে একে একে সবাই বের হয়ে যায়।
শুধুমাত্র হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) আমার আব্বাজান হযরত মাওলানা সৈয়দ বিসমিল্লাহ্ শাহ্ (রহঃ) কে সাথে নিয়ে সেখানে অবস্হান করেন।
এমনকি হযরত শেরে বাংলা (রহঃ) এর নির্দেশক্রমে পবিত্র মাজার শরীফের দরজা ও জানলাসমূহও বন্ধ করা হয়।
আমরা সবাই সঙ্গী সাথীসহ চরম কৌতুহল সহকারে দরজা জানালার ফাক দিয়ে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম।
বেশ র্দীর্ঘক্ষন পর হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) পবিত্র মাজার শরীফ থেকে বের হয়ে আসলেন।
আমি পরম কৌতুহল সহকারে আশ্চর্যান্বিত হয়ে আমার আব্বাজান কেবলা (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম , "আপনারা মাজার শরীফে এতক্ষন কি করেছেন?"
আমার এরূপ প্রশ্নবানে আমার আব্বাজান কেবলা (রহঃ) আমাকে মৃদু বকুনি সহাকারে জানালেন, "তুমি ছোট ছেলে এতকিছু বুঝবে না।
মোজাদ্দেদে মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) তোমার দাদাজান কেবলা (রাহঃ) কে নিয়ে একখানা মিটিং করেছেন।
উক্ত মিটিং এ গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী কেবলা কাবা (কঃ) ও হযরত আমানত শাহ্ কেবলা (রহঃ) উপস্হিত ছিলেন।"
শিক্ষাজীবন
শেরে বাংলা (রহ.) বাল্যকাল থেকেই অতি মেধাবী ও সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শৈশবকালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা আপন পিতার নিকট লাভ করেন অতঃপর তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা-এ-মুঈনুল ইসলামে ভর্তি হন। ঐ মাদ্রাসা দেওবন্দী কওমি নিয়ন্ত্রিত হলেও তৎকালে কয়েকজন সুন্নী আক্বীদার আলেমও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন কালে দেওয়ান নগর নিবাসী প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (রহ.) কে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে লাভ করেছিলেন। অতঃপর তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য হিন্দুস্থানে গমন করেন। দিল্লীর বিখ্যাত ফতেহপুর আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবি, উর্দু, ফার্সি ভাষার লিখিত বিভিন্ন শাস্ত্রে উপর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বুৎপত্তি অর্জন করেন। উক্ত মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল শেরে বাংলা (রহ.) এর মেধাশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁর খরচ বহন করার ঘোষণা দেন। অতঃপর হিন্দুস্থান থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের খেদমতে নিয়োজিত হন। একই মাদ্রাসা থেকে তিনি দাওরায়ে হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীর সনদ লাভ করেন। এছাড়া তিনি ইলমে লাদুন্নী দ্বারাও সমৃদ্ধ ছিলেন।তিনি হাটহাজারী এমদাদুল উলুম আজিজিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা ও রাউজান, রাঙ্গুনিয়া সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অবদান
সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহ.) এর অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি তদানীন্তন বৃটিশ আমল হতে পাক-ভারত বিভক্তির পর প্রথম পাক ভারত মহাযুদ্ধের সময় পর্যন্ত একাধারে সুদীর্ঘ সতেরো বৎসর নিজ এলাকা মেখল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ফুড কমিটির প্রেসিডেন্ট পদ অলংকৃত করেন। এমনকি চেয়ারম্যান ইলেকশনের পূর্বে মুফতি ফয়জুল্লাহ তার অনুসারীদের উদ্দেশ্য বলে, “তোমরা শেরে বাংলাকে ভোট দেবে” তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর দেয়, শেরে বাংলার সাথে আমার যে বিরোধ তা অন্য ব্যাপার কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর মত সুবিচারক ও ন্যায় বন্টনকারী বিশ্বস্ত কোন লোক তোমরা পাবে না।
শেরে বাংলা উপাধি লাভ
চল্লিশ দশকের প্রারম্ভে চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আব্দুল হামিদ ফখরে বাংলা (রহ.) অনেক আলেমসহ কাদিয়ানীদের সাথে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে মোনাজেরায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রশ্ন-উত্তর চলাকালে আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহ.) তাদের উত্তাপিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান পূর্বক সেই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই আল্লাহর অসীম কুদরতে কাদিয়ানীরা শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। অতঃপর বাতিলপন্তিরা পরাজিত হয়ে মজলিস ত্যাগ করে। উপস্থিত সকলে তাঁর এরূপ বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞান ও দুর্দান্ত সাহস দেখে অবাক হয়ে যায়। তখন আল্লামা আব্দুল হামিদ ফখরে বাংলা (রহ.) সবার সমর্থন নিয়ে ঘোষণা করেন, আজ আমি এই সভায় আলেম সমাজের প্রক্ষ থেকে ঘোষণা দিচ্ছি মাওলানা সৈয়দ আজিজুল হক আলকাদেরীকে “শেরে বাংলা” উপাধিতে ভূষিত করা হল। তখন উপস্থিত জনতা শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলে। এ ছাড়াও তিনি বাতিলপন্তিদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মোনাজেরায় অংশগ্রহণ করে বিজয় লাভ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে সমুন্নত রেখেছেন। অনেক সময় তাঁর হাতে পরাজয় বরণকরে বদ-আক্বীদা পোষণকারীরা তাঁর উপর হামলা করে রক্তাত্ব করে দেয়। একবার ডাক্তার মৃত ঘোষনার আট ঘন্টা পর তিনি জীবিত হয়ে উঠে বসে পড়েন।
জামাতে_ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর সাথে প্রকাশ্য চ্যালেণ্ঞ্জ অতঃপর মওদুদীর চরম পরাজয় বরন।
---------------------------------------------
মোজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, ইমামে আহলে সুন্নত, কুতুবে আলম, গাউছে জমান হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ শুধুমাত্র দেওবন্দী ওহাবীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তা নয়, তিনি অন্যান্য ভ্যান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে ও জেহাদ করেছেন। এখন ওহাবী মতবাদেরই আধুনিকায়ন মওদুদী মতবাদের উৎপত্তি লাভ ঘটেছিল। এই ঘৃণ্য রাসূল বিদ্বেষী এবং সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের শান অবমাননাকারী ঈমান বিধ্বংসী মতবাদের জম্মদাতা হল পাকিস্তানের আবুল আলা মওদুদী। আর জামাতে ইসলামী ও বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির হচ্ছে এই মতবাদেরই ধ্বজাআরী সংগঠন। এরা নব্য তাওহীদের দোহাই দিয়ে বরঞ্চ এজিদরুপী আদর্শের বিকাশ সাধন করে মুসলমানদের ঈমান হরণে তৎপর। হযরত আল্লামা শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ মওদুদীর এই ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জেহাদে অবর্তর্ণ হন। মওদুদীর বিভিন্ন পুস্তকে লিখিত ঈমান হরণকারী বিভিন্ন কুফরী উক্তির বিরুদ্ধে তিনি সর্বপ্রথম বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘীর ময়দানে মওদুদীর জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ পূর্ব থেকে মওদুদীর আগমন ও এই জনসভা সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। মওদুদীর এই অপতৎপরতায় বাংলার বাঘ আশেকে রাসূল মোজাদ্দেদে মিল্লাতের অন্তরে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। তিনি তাঁর জামাল খান রোড়াস্থ বাসভবন থেকে সরাসরি লালদিঘীর ময়দানে যাত্রা করলেন। মুওদুদী বক্তব্য রাখার জন্য যখন মঞ্চে দঁড়িয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সিংহ শার্দূল বেশে বাংলার বাঘ হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি মওদুদীকে বক্তব্য প্রদানে বাধা দিয়ে বজ্রকণ্ঠে চ্যালেণ্ঞ্জ ছুঁড়ে বললেন, ”আপনার কাছে আমার তিনটা প্রশ্ন আছে। এই তিনটা প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে পারলে আপনি বক্তব্য রাখতে পারবেন, নতুবা নয়। ”অতঃপর তিনি মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বীদা ও কুফরী উক্তি সম্পর্কে তিনটা প্রশ্ন উপস্থাপন করলেন। কিন্তু মওদুদী এই প্রশ্নসমূহের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন. ”এর উত্তর আমি ঢাকায় পৌছে দেব। ”এতে হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ‘ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল‘ কাদেরী রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ প্রতিবাদ করে দীপ্ত কণ্ঠে বললেন, ”মানুষের জ্ঞান থাকে সিনার ভিতর। আপনি কি আপনার জ্ঞান-ভাণ্ডার ঢাকায় রেখে এসেছেন? আপনি এখানে উত্তর দিন অথবা আপনরে কুফরী উক্তিসমূহ প্রত্যাহার করুন। হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল কাদেরী
রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ এর সম্মুখে মওদূদী সাহেব তার ভ্রান্ত আক্বীদা সম্পর্কে কোন বক্তব্য রাখতে সাহস করলেন না। পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় গিয়েও কোন উত্তর দেননি। বরং পাকিস্তান চলে যান। সেদিন লালদিগীর ময়দানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদেও কাছে মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বূদার স্বরুপ উন্নোচিত হয়েছিল। উল্লেখ্য তৎকালীন বহুল প্রচারিত দৈনিক আজান, পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
---
হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আল কাদেরী রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ স্বীয় জীবদ্দশায় বাতিলদের বিরুদ্ধে এরুপ আরও অসংখ্য অগণিত সম্মুখ মোনাজেরা বা বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন। যা পরিপূর্ণভাবে বিস্তারিত বিবরণ দিতে গেলে একটা বিরাট ভলিয়ম এর প্রয়োজন। প্রতিটি বাহাছে তিনি পরম করুণাময় আল্লাহ পাকের কুদরতে উন্নতশিরে বিজয় লাভ করেছেন। বাতিলরা সর্বদা পর্যুদস্থ ও অপমানিত হয়েছে। তাই একথা অনস্বীকার্য যে, তৎকালীন সময়ে হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ
আজিজুল হক শেরে বাংলা আল কাদেরী রাহমাতুল্লাহী আলাইহি রাহমাহ এর এরুপ অসীম সাহসিকতাপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ফলে তাঁরই একক নেতৃত্বে বাতিল শক্তি পর্যুদস্থ হয়ে সঠিক ইসলামের ডংকা ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান কালে দ্বন্দ্ব-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে ও বাতিলদের সাথে এরুপ সম্মুখ মোনাজেরা বা চ্যালেণ্ঞ্জ কদাটিৎও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ফলপ্রসূরতিতে বাতিল দুর্গসমূহ প্রভাব-প্রতিপত্তিতে নতুন করে ঈমান হরণের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
---
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় দেওবন্দী ওহাবীরা বিশ্ব ইজতেমা, আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন ইত্যাদি রুপসী নামধারণ করে প্রতিবৎসর উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহে মহাসমারোহে বিরাট বিরাট সমাবেশ করে যাচেছ। অন্যদিকে মওদুদীপন্থীরা ও বিভিন্ন তাফসীরুল কোরআন মাহফিল, জনসভা ইত্যাদির নাম দিয়ে তাদের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদার প্রচার ও প্রসার ঘটাচেছ। বাতিলপন্থীদের সমাবেশমূলক এ সমস্ত আচার অনুষ্ঠানসমূহ নিঃসন্দেহে সঠিক পথ আহলে সুন্নত ওয়াল জমাতের অস্থিত্বের উপর বিরাট হুমকি স্বরুপ।
গ্রন্থ রচনাঃ
সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) লিখিত উল্লেখযোগ্য
গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১) দিওয়ান-ই আযীয।
২) ইযাহুদ দালালাত বা মুনাজাতের দলিল।
৩) মজমু’আহ্-ই ফাতাওয়া-ই আযীযিয়াহ্ শরীফ।
ইন্তেকাল
১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর (১৩৮৯ হিজরীর ১২ই রজব) ৬৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।হাটহাজারী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযায় সর্বসম্মতিক্রমে ইমামতি করেন আল্লামা কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী। জানাযা শেষে হাটহাজারীর প্রাণকেন্দ্রে তাকে সমাহিত করা হয়। প্রতি বছর ১২ই রজব হাটহাজারী দরবার শরীফে তার পবিত্র বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয়।
মোজাদ্দেদে মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) কে বুঝার এবং তাঁর সুন্নিয়তের খেদমত আল্লাহ কবুল করুন, আমিন
Comments
Post a Comment