১২ রবিউল আউয়াল?

 


মুফতি বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর মাঃ জিঃ

১২ রবিউল আওয়াল ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর আনন্দ উদযাপনের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ একই দিন নবীর বিছালও বলে জোর প্রচারণা চালায়। ওই দিন আনন্দের পরিবর্তে শোক প্রকাশ যৌক্তিক বলে মতও ব্যক্ত করে থাকেন। আনন্দ নাকি শোক? কোনটা যৌক্তিক, সেই বিতর্ক তোলা রইল। সেই দিন আগমন নাকি গমন, সেটি আজকের আলোচ্য।


প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর ধরাধামে শুভাগমন পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মতৈক্যে ১২ রবিউল আওয়াল হস্তির বছর। জ্যোতির্বিজ্ঞানী  মাহমূদ পাশা ও পরবর্তী অন্যান্য কতেক গবেষকের গবেষণা মতে ৯ রবিউল আওয়ালের উল্লেখও রয়েছে। অধিকন্তু প্রাচীন কাল থেকেই ইসলামী বিশ্বের মতৈক্য ১২ তারিখের ওপর। সুতরাং এটিই গ্রহণযোগ্য উক্তি। এ ধারাবাহিকতায় কয়েকটি ঐতিহাসিক উদ্ধৃতির উল্লেখ করছি।

ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين عام الفيل لإثنىٰ عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الأول -

অর্থাৎ "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শুভাবির্ভাব হস্তির বছরের ১২ রবিউল আওয়াল সোমবারের দিন হয়েছে"। সূত্র: আল্ওয়াফা ৮৭ পৃষ্ঠা, ইবনে জাওযী। 

ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين لإثنىٰ عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الأول عام الفيل -

অর্থাৎ: "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব রোজ সোমবার, হস্তির বছরের রবিউল আওয়ালের ১২ রজনী অতিক্রমান্তে হয়েছে"। সূত্র: সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা।

ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين عام الفيل لإثنىٰ عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الأول

অর্থাৎ: "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শুভাগমন রোজ সোমবার ১২ রবিউল আওয়াল হস্তির বছর হয়েছে"। সূত্র: তারীখুল উমামি ওয়াল মুলূকি, ২য় খণ্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা, ইবনে জারীর ত্বাবারী।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর বিছাল শরীফ ১১ হিজরীর  রবিউল আওয়াল শরীফের সোমবারে হওয়ার বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু তারিখের ব্যাপারে তিনটি উক্তি রয়েছে, যথাক্রমে ১, ২ ও ১২ । তৃতীয় উক্তিটি অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ গ্রহণ করলেও সুহায়লী ও খাওয়ারিযিমী হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, একাদশ হিজরীর ১২ তারিখ সোমবার হতেই পারেনা। কারণ, বিশ্বমুসলিম একমত যে, দশম হিজরীর আরাফা দিবস (৯ যিলহজ্ব ) ছিল শুক্রবার। এ হিসাবে যিলহজ্ব মাসের প্রবেশ হয়, বৃহস্পতিবার। যিলহজ্ব মাস ২৯ (ঊনত্রিশ) বা ৩০ (ত্রিশ) দিনের হলে একাদশ হিজরীর মুহররম মাসের প্রবেশ হবে, শুক্রবার বা শনিবার। মুহররম মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হলে সফর মাসের প্রবেশ হবে, শনিবার বা রবিবার বা সোমবার। সফর মাস যদি ২৯ বা ৩০ দিনের হলে রবিউল আওয়ালের প্রবেশ হবে, রবিবার বা সোমবার বা মঙ্গলবার বা বুধবার। এ চার দিনের যেই দিনই রবিউল আওয়াল শরীফের প্রবেশ হোক না কেন, তবে ১২ তারিখ সোমবার মিলেই না। সুতরাং দ্বিতীয় উক্তি ২ রবিউল আওয়াল হওয়াটাই যৌক্তিক; যা আবূল ক্বাসিম আব্দুর রহমান সুহায়লী তাঁর 'আররাওদ্বুল উনুফ' গ্রন্থে, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তাঁর 'উমদাতুল ক্বারী' গ্রন্থে এবং আল্লামা ইবনু হাজার আসক্বালানী 'ফতহুল বারী' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত যে, ১২ রবিউল আওয়াল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শুভাগমন, মহাপ্রয়াণ নয়।


Comments

Popular posts from this blog

ছেমা ই দালালাত

ইউসুফে ছানি গাউছুল আজম ছৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা রহঃ জীবনী দর্পণ।

কোরআন সুন্নার আলোকে পীর ও মুরিদ।