মীলাদুন্নবী (ﷺ). সম্পর্কে যৌক্তিক দালালিক বিশ্লেষণ।
মীলাদুন্নবী (ﷺ). এর আলোচনা কি
পবিত্র কুরআনে আছে??
➖➖➖➖
উত্তরঃ সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ বা
সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ পবিত্র ঈদে
মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বিষয়ে একটু তাত্ত্বিক
বিশ্লেষন
মহান আল্লাহ পাক বলেন, “হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক
উনার অনুগ্রহ ও রহমত পাওয়ার কারনে
খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ
করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে
উত্তম।” (পবিত্র সূরা ইউনূছ আলাইহিস
সালাম : আয়াত শরীফ ৫৮)
আমরা মু’মিন মুসলমান, নবীজীর
আশেকগন এই আয়াত শরীফে “অনুগ্রহ ও
রহমত’ বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝে থাকি।
বাতিল ফির্কা তখন দলীল দেয় অনেক
মুফাসসিরতো এই আয়াতে “অনুগ্রহ ও
রহমত” বলতে ১) কুরআন শরীফ ২)
ইসলাম ৩) ইলিম ৪) হেদায়েত ৫) নেক
আমল ইত্যাদি বুঝিয়েছেন (যদিও শক্ত
দলীল দ্বারা হুযুর পাক (ﷺ)কে বুঝানো
হয়েছে)
হ্যাঁ, ভালো কথা। কোন সমস্যা নাই।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, যদি
অনুগ্রহ ও রহমত এর অর্থ কুরআন শরীফ
ধরা হয় তবে কুরআন শরীফ পাওয়ার
কারনে খুশি প্রকাশ করতে হবে। কারন
কুরআন শরীফ আল্লাহ পাকের নিয়ামত।
যদি ইসলাম, ইলিম, হেদায়েত, নেক
আমল ধরা হয় তবে অর্থ হচ্ছে এই সকল
নিয়ামত পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ
করতে হবে। অর্থাৎ নিয়ামত পাওয়ার
জন্য খুশি প্রকাশ করতে হবে এই
কনসেপ্টে আপনিও একমত হলেন।
এবার পয়েন্টে আসেন, যিনি
রহমাতুল্লীল আ’লামীন, হাবীবুল্লাহ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে না পেতেন তবে কি
আপনি কুরআন শরীফ পেতেন?
রহমাতুল্লীল আ’লামীন, হাবীবুল্লাহ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে না পেতেন তবে কি
ইসলাম পেতেন? ইলিম পেতেন?
হেদায়েত পেতেন? নেক আমল পেতেন?
এসকল নেক আমল, নেক আমল হিসাবে
প্রকাশ হয়েছে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার আগমনের ফলে। তাহলে দেখা
যাচ্ছে, সবচাইতে বড় এবং মূল নিয়ামত
হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি। সবচাইতে বড় অনুগ্রহ হচ্ছেন
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। আর
তিনিতো সমগ্র আলমের রহমত (সূরা
আম্বিয়া ১০৭)
মোটকথা হচ্ছে যদি আমরা হাবীবুল্লাহ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি
প্রকাশ করি তাহলে এই খুশি প্রকাশের
মাধ্যমে কুরআন শরীফ ,ইসলাম, ইলিম,
হেদায়েত, নেক আমল সবকিছুর জন্য
শুকরিয়া ও খুশি প্রকাশ হয়ে যায়।
কারন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন জামিউন
নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ।
এখন যদি প্রশ্ন করি, হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে পাওয়ার কারনে আপনি কি
খুশি?
মনে হয় না, মুসলমানদের মধ্যে এমন
কোন গোত্র আছে সে বলবে যে খুশি নয়।
নাউযুবিল্লাহ। অস্বীকার করার
সুযোগই নেই। খুশি নয় বললে সে
ঈমানদারই থাকতে পারবে না। কারন
একমাত্র ইবলিশ ই নাখোশ ছিলো
(বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।
নাউযুবিল্লাহ।
অর্থাৎ সবাই খুশি। তাহলে এই খুশি
প্রকাশের কথা স্বীকার করতে এত
গড়িমসি কেন? কেন এত দ্বীধা দন্দ?
কেন এ্ত বির্তক?
ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর পক্ষে ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওয়াব নজদীর ফতোয়া-
বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্ননবীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারাই স্বীকার করবে তাদের একমাত্র পছন্দনীয় ইমাম হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদী। এরা ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু করে সকল ইমাম মুস্তাহিদ আওলিয়ায়ে কিরামের বিরোধীতা করলেও ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর কোন বিরোধীতা করে না। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তাদের কোন ফতোয়া যদি নিজেদের মন মত না হয় তবে সেটা সযত্নে গোপন করে রাখে। কিন্তু সত্য কি গোপন রাখা যায়?
ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩খৃঃ – ১৩২৮খৃঃ) তার কিতাব “ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম” এ লিখেছে,
”যদি মিলাদ মাহফিল নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে আল্লাহ এ মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সওয়াব বা প্রতিদান দেবেন।” (দলীলঃ ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৩)।
একই কিতাবের অন্যত্র সে লিখেছে, “বরং ঐ দিনে (রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মদিনে) পরিপূর্ণরূপে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারন হবে।” (দলীলঃ ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৫)।
ওহাবীদের নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী’র (১৭০৩খৃঃ-১৭৯২খৃঃ) তার কিতাব “মুখতাসার সিরাতে রাসুল” এ লিখেছেন, “কট্টর কাফির আবু লাহাব রাসুলে কারিমে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র জন্মের সুসংবাদ শুনে মনের খুশীতে নিজ দাসী সুয়ায়বাহকে (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) মুক্তি দেয়ার কারনে সে প্রতি সোমবার (নবীজীর বেলাদত শরীফের দিন) দোযখে থেকেও শান্তিদায়ক পানীয় পেয়ে থাকে।
উল্লেখ্য , আব্দুল ওহাব নজদী আবু লাহাবের শাস্তি হ্রাসের বিষয় উল্লেখ করে মিলাদুন্ননবী পালনের গুরুত্বের কথা স্বীকার করে।এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, তিনি শামসুদ্দীন নাসের দামিস্কির কিতাব ‘মওরদুস সাদী ফি মওলদিল হাদী’ থেকে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এবং সেখানে দামিস্কির রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত শেরটিও হুবহু উদ্ধৃত করেছে।
বিরোধিতাকারীদের কাছে জানতে চাই , আপনারা কুরআন শরীফের দলীল মানেন না… তাফসিরের দলীল মানেন না… হাদীস শরীফ এর দলীল মানেন না … ইমাম মুস্তাহিদের ঐক্যমত্যের দলীল মানেন না…. মানবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারন অস্বীকারকারী দুনিয়াতে সব সময়ই ছিলো , কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাই বলে কি এখন নিজেদের মুরুব্বীদের ফতোয়াও মানবেন না ? তাহলে মানবে কাকে ?
শায়খুল হাদীস আজিযুল হক ঈদে মিলাদুন্নবীর দলীল
বাংলাদেশের দেওবন্দ সিলসিলার অন্যতম ,তাদের শায়খুল হাদীস আজিযুল হক বুখারী শরীফের অনুবাদ ও টীকা করেছিলো। উক্ত অনুবাদ গ্রন্থের ৫ম খন্ডটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। (৫ম খন্ড পড়তে চাইলে:https://goo.gl/q2xAok)
৫ম খন্ডের ৩৭, ৩৮, ৩৯ পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করা হলো, সেখান থেকে যা প্রমাণ হচ্ছে,
১) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন সমগ্র ধরনীতে আনন্দের হিল্লোল প্রবাহিত হয়।
২) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাতিরে আরশ-কুরসী, লৌহ কলম, আসমান-জমিন, মানুষ- ফিরিশতা সৃষ্টি হয়েছে।
৩) উনার আগমনের অভিন্দন জানিয়ে বলা হয়েছে “ ইয়া নবী সালামু আলাইকা - ইয়া রসূল সালামু আলাইকা - ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা - ছালাওয়াতুল্লাহি আলাইকা।
৪) উনার অাগমন অর্ভ্যথনার জন্য সমগ্র সৃষ্টিকুল অধির আগ্রহের প্রহর গুনছিলো।
৫) নুরানী আত্মা ও নুরানী দেহ আগমন করেন এই দুনিয়ায়।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সৃষ্টির মহান উপলক্ষ হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিবসটার মর্যাদা ও গুরুত্ব কত?
ওহাবীদের অন্যতম গুরু আশরাফআলী থানবীর মতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)পালন করা জায়েজ।
ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর বিরোধিতাকারীদের মধ্যে একটা সম্প্রদায় হলো ওহাবী। আর পাক ভারত উপমহাদেশে ওহাবীদের একজন বড় ইমাম, দেওবন্দ মাদ্রাসার অহংকার, যাকে তারা "হাকীমুল উম্মাত" বলে ডাকে তার নাম মাওঃ আশরাফ আলী থানবী।
তিনি তার লিখিত বইতে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর পক্ষে দলিল দিয়েছেন। কিতাবের নাম হচ্ছে “ঈদে মীলাদুন্নবী কী শরয়ী হাইসিয়ত” যার বাংলায় অনুবাদ হয়েছে “শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী”। উক্ত কিতাবে নিয়ামত, অনুগ্রহ, রহমত দ্বারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। এই কিতাবে ৩৬ থেকে ৩৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখায় যা বোঝা যায়,
কিন্তু বড়োই পরিতাপের বিষয় হলো সেই ওহাবী মাজহাবের লোকজন ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর বিপক্ষে কথা বলে।
তার এই কিতাবে ৩৬ থেকে ৩৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখায় যা বোঝা যায়:
১) সমস্ত নিয়ামতের নিয়ামত হচ্ছেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
২) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন প্রতিটি বস্তুর জন্য রহমত।
৩) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান অস্তিত্ব মুবারক সর্বপ্রথম নুর হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৪) উক্ত নুর মুবারক দৈহিক অাকৃতি মুবারকে গোটা বিশ্বজাহান আলোকিত করেছেন
৫) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র বিশ্ব জগতের জন্য রহমত, উনার আগমন সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত।
৬) সূরা ইউনুছ শরীফের ৫৮ আয়াতের আল্লাহ পাকের ফদ্বল ও রহমত পাওয়ার কারনে যে খুশি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে সেই ফদ্বল ও রহমত হচ্ছেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
৭) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সমগ্র নিয়ামত, অনুগ্রহ, রহমতের মূূল উৎস।
৮) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনে খুশি প্রকাশ সবার জন্য আবশ্যক।
৯) সূরা ইউনুস ৫৮ আয়াত দ্বারা বোঝা গেলো নিয়ামতের জন্য আনন্দিত হওয়া অাবশক।
১০) আর ফদ্বল ও রহমত পেয়ে খুশি প্রকাশ দুনিয়ার সমস্ত আমলের চাইতে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।
উক্ত কিতাবে যদিও কিছু ক্ষেত্রে আশরাফ আলী থানবী কিছু ইখতেলাফ করেছে কিন্তু উপরো্ক্ত আলোচনায় তার বক্তব্য ঠিক আছে। এই টুকুও যদি যারা বিরোধীতা করে তারা মানতে পারে তাহলে মূল বিষয়ে বিরোধীতা থাকার কথা নয়।
এখন কাকে বেদাত ফতোয়া দিবা?
আল্লাহ পাক সাবাইকে বিষয় গুলো বোঝা ও উপলব্দির তৌফিক দান করুন।
হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
কাফিরদের কোন ইবাদতই কাজে আসে না অথচ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর খুশিতে আবু লাহাব তার বাদীকে আযাদ করায় পুরষ্কৃত হয়। এ সম্পর্কে সহিহ হাদিস বর্ণিত আছে।
হযরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
ﻗﺎﻝ ﻋﺮﻭﺓ ﻭﺛﻮﻳﺒﺔ ﻣﻮﻻﺓ ﻻﺑﻰ ﻟﻬﺐ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺎﺭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﻣﺎﺕﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﺭﻳﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻫﻠﻪ ﺑﺸﺮ ﺣﻴﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻣﺎﺫﺍ ﻟﻘﻴﺖ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻟﻢ ﺍﻟﻖ ﺑﻌﺪﻛﻢ ﻏﻴﺮ ﺍﻧﻰ ﺳﻘﻴﺖ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺑﻌﺘﺎﻗﺘﻰ ﺛﻮﻳﺒﺔ ০
হযরত সুহাইবাহ (রাঃ) আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে [রাসুল ﷺ] এর বেলাদাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কৃতদাসী সুহাইবাহ (রাঃ) কে আযাদ করে দিয়েছিল।
যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ [হযরত আব্বাস রা.] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন,
“তোমার অবস্থা কেমন?”
- আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল যে দিন [রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বেলাদতের খুশিতে] দাসী সুহাইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে প্রতি সোমবার আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি পান করে থাকি ঐদিন (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।” 1
উক্ত হাদিস শরীফের আলোকে :
👉 ইমাম ইবনুজ জাওযী (রহঃ) বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﺰﺭﻯ ﻓﺎﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﺑﻮﺍﻟﻬﺐ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﺍﻟﺬﻯ ﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﺬﻣﻪ ﺟﻮﺯﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻔﺮﺣﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪ
ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻪ ﻓﻤﺎ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﻤﺆﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺴﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩﻭﻳﺒﺬﻝﻣﺎﺗﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻓﻰ ﻣﺤﺒﺘﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﺰﺍﺅﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﺍﻥ ﻳﺪﺧﻠﻪﺑﻔﻀﻠﻪ ﺍﻟﻌﻤﻴﻢ ﺟﻨﺎﺕ ﺍﻟﻨﻌﻴﻢ ০ ( ﻣﻮﺍﻫﺐ ﺍﻟﻠﺪﻧﻴﻪ ﺝ ১ ০ ﺹ২৭ ﺯﺭﻗﺎﻧﻰ ﺝ ০১ ﺹ১৩৯ )
"যে কাফের আবু লাহাবের বিরোদ্ধে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে এবং যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত, সে আবু লাহাবও যদি হুজুর (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খুশি হওয়াতে সুফল পায়, তাহলে তাঁর উম্মতের মধ্যে যে একত্ববাদী মুসলমান এবং তাঁর মিলাদুন্নবীতে (ﷺ) আনন্দিত হয় তাঁর মহব্বতে যথাসাধ্য দান করে,
তার অবস্থা কী হবে? আমি কসম করে বলছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে তার বিনিময় এ হবে যে, তিনি সর্বব্যাপী অনুগ্রহ দ্বারা তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’ 2
👉 বিশ্ব বরণ্য ফকিহ্ ও শারিহে বােখারী, ইমাম কাস্তাল্লানী (রহঃ) তদীয় কিতাবে বলেন :
“মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহমত দান করুক যিনি রাসূল (ﷺ) মিলাদের মােবারক রজনীকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।”
[ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃঃ]
👉 ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,
ﺟﻨﺎﻧﺠﻪ ﺩﺭ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻣﺪﻩ ﺍﺳﺖ ﻭﺩﺭﻳﻨﺠﺎ ﺳﻨﺪﺍﺳﺖ ﻣﺮﺍﻫﻞ ﻣﻮﺍﻟﻴﺪ ﺭﺍﻛﻪ ﺩﺭﺷﺐ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﻭﺳﻠﻢ ﺳﺮﻭﺭ ﻛﻨﻨﺪ ﻭﺑﺬﻝ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﻧﻤﺎﻳﻨﺪ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻛﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﺑﻮﺩ ﻭﻗﺮﺍﻥ ﺑﻤﺬﻣﺖ ﻭﻯ ﻧﺎﺯﻝ ﺷﺪﻩ ﺟﻮﻥﺑﺴﺮﻭﺭ ﺑﻤﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﻭ ﺑﺬﻝ ﺷﻴﺮ ﺟﺎﺭﻳﻪ
ﻭﻯ ﺑﺠﻬﺔ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺟﺰﺍ ﺩﺍﺩﻩ ﺷﺪ ﺗﺎﺣﺎﻝ ﻣﺴﻠﻤﺎﻥ ﻛﻪ ﻣﻤﻠﻮﺳﺖ ﺑﻤﺤﺒﺖ ﻭﺳﺮﻭﺭ ﻭﺑﺬﻝ ﻣﺎﻝ ﺩﺭ ﻃﺮﻳﻖﻭﻯﺟﻪ ﺑﺎﺷﺪ ﻭﻟﻴﻜﻦ ﺑﺎﻳﺪﻛﻪ ﺍﺯ ﺑﺪﻋﺘﻬﺎ ﻛﻪ ﻋﻮﺍﻡ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻛﺮﺩﻩ ﺍﻧﺪﺍﺯ ﺗﻐﻨﻰ ﻭﺍﻻﺕ ﻣﺤﺮﻣﻪ ﻭ ﻣﻨﻜﺮﺍﺕ ﺧﺎﻟﻰﺑﺎﺷﺪ ০ ( ﻣﺪﺍﺭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻮﺕ ﺝ ২ ০ ﺹ২৬ )
"উক্ত ঘটনা মিলাদ শরীফ পাঠকারীদের জন্য একটি বৃহত্তম দলিল, যারা মিলাদুন্নবীর রাতে আনন্দ উৎসব ও দান খয়ারাত করে থাকেন। আবু লাহাব কাফের এবং তার বিরোদ্ধে কোরআন নাজিল হওয়া সত্বেও নবী পাক (ﷺ) জন্মের সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে নূরবীকে দুধপান করানোর নিমিত্তে বাদী [হযরত সুয়াইবাহ (রাঃ) কে] আজাদ করে দেয়, সে কারণে তাকে পুরস্কার স্বরূপ প্রতি সোমবারে তার আজাব নিরসন করা হল। এখন যারা ঈমানদার নবীপ্রেমিক আনন্দ উৎসব ও দান খয়রাত করেন তাঁদের পুরস্কার কীরূপ হবে? অবশ্য সে মিলাদকে শরীফে গান ও হারাম বাদ্যযন্ত্র হতে পবিত্র রাখতে হবে।
[ইমাম আব্দুল হক দেহলভী (রহ) : মাদারিজুন নবুয়ত ২য় খণ্ড ২৬ পৃঃ]
👉 বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব (রহ) উনার কিতাবে লিখেন-
قال النبي صلي الله عليه و سلم رايت ابا لهب في النار يصيح العطش العطش فيسقي من الماء في نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقي ثويبة لانها ارضعتك
অর্থ : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও ! পানি দাও !
অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারনে এ পানি পাচ্ছো ? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত সুয়াইবা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে মুক্ত করার কারনে এই ফায়দা পাচ্ছি ! কেননা তিনি আপনাকে দুগ্ধ মুবারক পান করিয়েছেন !"
[তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম সুহাইলী (রহ) লিখেন :
وذكر السهيلي ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عني في كل يوم اثنين وذلك ان النبي صلي الله عليه و سلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী (রহ) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে আমি স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বস রা.) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই। তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার ! সেই সোমবারে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) এর বিলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা (রা) তিনি আবু লাহাবকে খবরটি জানালেন তখন আবু লাহাব মিলাদুন্নবীর সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয় !" 3
[তথ্যসূত্রঃ
1.
১.সহিহ বুখারী : ২৬৪৪, ২৬৪৫, ২৬৪৬, ৩১০৫, ৪৭৯৬, ৫০৯৯, ৫১০০, ৫১০১, ৫১০৩, ৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৪, ৫১৩৩, ৫২৩৯, ৫৩৭২, ৬১৫৬
২.ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ : হাদিস ২৫৯৫৩ উক্ত শিরোনামে لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن
পুনরায় হাদিস ২৬৮৬৫, মতন :
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
৩.ইমাম নাসাঈ : আস সুনানুল কুবরা : হাদিস ৫৩৯৪, ৫৩৯৫
৪.ইমাম নাসাঈ : আস সুনান আস-সুগরা : হাদিস ৩২৮৪, ৩২৮৫, ৩২৮৬, ৩২৮৭
৫.ইবনে মাজাহ : হাদিস ১৯৩৯ শিরোনাম
( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
৬. মুসলিম : হাদিস ২৬৩৪, ২৬৩৫
৭. সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪১১০, ৪১১১ হাদিসের মতন :
إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
৮.ইমাম বায়হাকী : সুনান আল কুবরা : বিবাহ অধ্যায়
৯.জামেউল হাদিস : মাসানিদুস সাহাবা : হাদিস ৪৩৫৪৫
১০.ইমাম বাগবি : শরহুস সুন্নাহ : ৯ম খন্ড : ৭৫ পৃ
১১.ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : ৬ খন্ড, হাদিস ১৫৭২৫
১২.মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৭ম খন্ড, হাদিস ১৩৫৪৬
১৩.ইমাম আঈনী : উমদাতুল কারী শরহে বুখারী : ১৪ খন্ড, পৃ ৪৫
১৪.ইমাম ইবনে কাসীর : সিরাত আন নববিয়্যাহ : ১ম খন্ড , পৃ ২২৪
১৫.শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ
১৬.সুবলুল হুয়া ওয়ার রশদ : ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃ
১৭.ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী : ৭ম জিলদের ১২৫
১৮.ইবনুল কাইয়্যুম : তোহফাতুল মাওদুদ বি আহকাম আল মাওলুদ, ১৯ পৃ
১৯.ইবনে আব্দুল ওহাব, মুখতাসার সিরাতুর রাসূল, মাওলিদুন্নবী।]
১. ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুনিয়া ১ম জিল্দ, ২৭ পৃঃ।
২. ইমাম জুরকানীঃ জুরকানী ১ম জিল্দ ১৩৭ পৃঃ।
3
১. ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা
২. ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী : ওমদাতুল ক্বারী লি শরহে বুখারী ২০ খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা !
৩. ইমাম কাস্তালানী : মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড !
৪. শরহুয যারকানী ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা !
৷ ৷৷৷ মোহাম্মদ সুফি ওসমান গনি......
Comments
Post a Comment