আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন খাস সুন্নত
আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন খাস সুন্নত উনার অন্তর্ভূক্ত সুবহানাল্লাহ।
আযান ও ইক্বামতে রাসূলে পাকের নাম মুবারক ‘মুহাম্মদ’ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলকে চুম্বন করে তা চোখে মোছা সম্পর্কে শরীয়তের দলীল
হাজার বছর ধরে মুসলিম মিল্লাতের মাঝে এ প্রথা চলে আসছে যে, হুযুর আকদাস, রহমতে আলম জানে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে পরমভক্তি ভরে বৃদ্ধাঙ্গুলি চুমু দিয়ে চোখে মালিশ করা। বিশেষ করে আযানে যখন
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ
এই পবিত্র বাক্য শুনে তখন ছোট বড় সকলে পরম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে আপন বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে তা চোখে মোছে নেয়। রাসূল প্রেমের এই অমৃত সুধা পানকারী প্রেমিকগণের পরিপূর্ণ ভক্তি সম্মানের এই মুস্তাহাব আমলকে বর্তমান যুগের অনেক মুনাফিক নিষেধ করে থাকে। এমনকি এই পবিত্র আমলকে বিদআত বলে অপপ্রচার চালিয়ে সরলমনা মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালায়।
বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বনের এই মাসয়ালা নিয়ে বর্তমানে জনসাধারণের মাঝে অনেক কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া ফ্যাসাদও হয়ে যায়। পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করলে এবং করতে শুনলে বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন দিয়ে আপন দু’চোখে মালিশ করে বরকত হাসিল করার এই আমলকে বাধাদানকারী কাঠমোল্লা, মূর্খ মৌলভীরা শুধু বিদআত, বিদআত বলে চিৎকার করে কিন্তু তাদের এ দাবীর পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ পেশ করতে পারেনা বরং উল্টো সাধারণ মুসলমানদেরকে যারা এ আমল করেন তাদেরকে বলে, এটা জায়েয এ মর্মে এমন কোন দলীল দাও তো দেখি। সরলমনা সাধারণ মুসলমানরা দলীল পেশ করতে না পেরে এটাই জবাব দেয় যে, এই বরকতময় আমল তো আমরা আমাদের বাপ- দাদা ও বুযূর্গ সূফী মুত্তাকীদেরকে করতে দেখে আসছি। এই আমল তো শুধু দেখা- দেখিভাবে প্রচলিত এরকম একটি আমল নয়, বরং যুগ যুগ ধরে ইসলামী শরীয়ত ও মুসলিম মিল্লাতের কাছে গ্রহণযোগ্য অনন্য বরকতময় একটি আমল। এর পরেও ওই মুনাফিক দলগুলো তাদের যতটুকু সাধ্য ততটুকু শক্তি ব্যয় করে সরলমনা মুসলমানকে এই মহত্বপূর্ণ আমল থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালায়। অথচ, এই বরকতমন্ডিত আমলের বৈধতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যথেষ্ট দলীল প্রমাণ রয়েছে। ঐ দলীলগুলো থেকে কয়েকটি দলীল এখানে পেশ করা হচ্ছে, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমানরা ঐ সকল মুখোশধারী মুনাফিক মুসলমানের খপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত হতে না হয়।
দলীল নং-১:- ইমাম দায়লামী মাসনাদুল ফিরদাউস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন সত্যবাদীদের সরদার, মুত্তাকীদের ইমাম, খলীফাতুর রাসুল, আমীরুল মুমিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, মুয়াযযিন আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাছুলুল্লাহ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ বলতে যখন শুনতেন তখন
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيِّنَا
উচ্চারণঃ- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবুদুহু ওয়া রাসুলুহু, রাদ্বিতু বিল্লাহি
রাব্বা ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনা ওয়া বি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবীয়্যানা (এই দোয়া) পড়তেন। অতঃপর ঐ দুই কালেমা আঙ্গুলের ভেতর দিকের সন্ধিস্থল চুমু খেয়ে চোখে লাগাতেন। সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এই আমল দেখে রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيْلِىْ فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِىْ-
যে এমন করবে যেমনি আমার বন্ধু করেছে, তার ব্যাপারে আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল।
দলীল নং-২: ইমাম আল্লামা আলী বিন সুলতান হারভী, ক্বারী, মক্কী, প্রকাশ মোল্লা আলী কারী আলায়হির রাহমাহ তার সর্বজন গ্রহণযোগ্য কিতাব মউদ্বুআতে কবীর গ্রন্থে পবিত্র নাম মুবারক শুনে আঙ্গুল চুম্বনের ব্যাপারে বলেন
وَاِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ اِلٰى الصِّدِّيْقِ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَلٰىْ عَنْهُ فَيَكْفِىَ لِلْعَمَلِ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلٰوةِ وَالسَّلَامِ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةُ الْخُلَفَاءَ الرَّاشِدِيْنَ-
অর্থাৎ- হযরত সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে এ কাজের প্রমাণ পাওয়া আমলের জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক, আমি ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতের উপর আমল করা।
তাই হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে কোন আমল প্রমাণ পাওয়া বস্তুত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে কোন আমলের প্রমাণ বহন করে।
দলীল নং- ৩: ইমাম শামছুদ্দীন সাখাভী তার রচিত মাক্বাসিদ এ হাসানাহ গ্রন্থে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আঙ্গুল চুম্বনের এই আমলকে মুস্তাহাব বলে মন্তব্য করেছেন।
দলীল নং- ৪: বরেণ্য ইমাম হযরত আবুল আব্বাস আহমদ বিন আবূ বকর রাওআদ ইয়েমেনি সূফি তার রচিত ‘মাওজিবাতুর রাহমাহ ওয়া আযাঈমুল মাগফিরাহ’ নামক গ্রন্থে হযরত সায়্যিদুনা খিযির আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন , হযরত খিযির আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেন-
مَنْ قَالَ حِيْنَ سَمِعَ الْمُؤَذِّنُ يَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ مَرحَبًا بِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةُ عَيْنِى مُحَمَّدَ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ يُقْبَلُ اَبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يَرْمَدْ اَبْدًا-
যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনে
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ مَرْحَبًا بِحَبِيْبِيْ وَقُرَّةُ عَيْنِىْ مُحَمَّدَ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
পড়ে দুই বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে তা তার আপন দু’চোখে লাগাবে, তার চোখ কোন দিন অসুস্থ হবে না।
দলীল নং- ৫: ‘মাওজিবাতুর রাহমাহ’ গ্রন্থে হযরত ফকীহ মুহাম্মদ বিন আলবাবা তার ভাই থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আপন অবস্থার কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
اَنَّهُ هَبَتْ رِيْحُ فَوَقَعْتْ مِنْهُ حَصَّاةٌ فِىْ عَيْنِهِ وَاَعْيَاهُ خُرُوْجِهَا وَالْمُتْهُ اَشَدُّ الْاَلَمِ وَاَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ الْمُؤَذِّنُ يَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ قَالَ ذَالِكَ فَخَرَجْتُ الحَصَّاةُ مِنْ فَوْرِهِ ، قَالَ الرَّوَادُ رَحِمَهُ اللّٰهُ تَعَالٰى وَهَذَا يَسِيْرُ فِىْ جَنْبِ فَضَائِلِ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمُ-
অর্থাৎ- একদিন খুব জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে বাতাসের বেগে একটি কঙ্কর তার চোখে ঢুকে যায়, তা বের করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হল কিন্তু বের হলনা এবং তা অসম্ভব ব্যথা- বেদনা শুরু করে দিল। এমন সময়ে সে মুয়াযযিনের আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বাক্যটি বলতে শুনল, তখন উল্লিখিত দোয়া পড়ে এই বরকতময় আমল করল। সাথে সাথে তার চোখ থেকে ওই কঙ্কর বের হয়ে গেল। হযরত রাওআদ বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহত্ত্বের সামনে সেটা তেমন কিছু নয়।
দলীল নং-৬: পবিত্র মদীনায়ে তায়্যিবাহ’র খতীব, হযরত ইমাম শামসুদ্দীন মুহাম্মদ বিন সালেহ মাদানী তার রচিত তারীখ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,
رَوِيَ عَنِ الْفَقِيْهِ مُحَمَّدٍ بْنِ سَعِيْدٍ الْخَوَلَانِيْ قَالَ اَخْبَرَنِيْ فَقِيْهُ الْعَالِمِ اَبُوْ الْحَسَنِ عَلِي بْنِ حَدِيْدِ الْحُسَيْنِيْ اَخْبَرَنِيْ الْفَقِيْهُ الزَّاهِدِ الْبِلَالِىْ عَنِ الْحَسَنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهُ قَالَ مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنُ يَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ مَرْحَبًا بِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةُ عَيْنِيْ مُحَمَّدُبْنِ عَبْدِ اللّٰهِ وَيُقْبَلُ اِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يَعَمْ وَلَمْ يَرْمَد-
অর্থাৎ- ফকীহ মুহাম্মদ বিন সাঈদ খাওলানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে ফকীহ আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ বিন হাদীদ হোসাইনী খবর দিয়েছেন, ফকীহ যাহেদ বিলালী ইমাম হাসান মুজতাবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে ব্যক্তি, মুয়াযযিনের اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ শুনে-
مَرْحَبًا بِحَبِيْبِيْ وَقُرَّةُ عَيْنِيْ مُحَمَّدُ بْنِ عَبْدِ اللّٰه
এই দোয়া পড়ে আপন বৃদ্ধাঙ্গুল চুমু দিয়ে আপন চোখে লাগাবে, ঐ ব্যক্তির চোখ না কখনো অন্ধ হবে, না কখনো ব্যাথা অনুভব করবে।
দলীল নং-৭: খতীবে মদীনায়ে তায়্যিবাহ হযরত শামসুদ্দীন বনি সালেহ মাদানী তার ‘তারীখ’ গ্রন্থে হযরত মাজদ মিসরী, [যিনি সালফে-সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন] থেকে বর্ণনা করেন, মাজদ মিসরী বলেন
اِذَا سَمِعَ ذِكْرَهُ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ الْاَذَانِ وَجَمَعَ اَصَبِعَيْهِ الْمُسَبَّحَةِ وَالْاِبْهَامُ وَقَبَّلَهُمَا وَمَسْحَ بِهِمَا عَيْنَيْهِ لَمْ يَرْمَدْ اَبَدًا-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আযানের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র নাম শুনে শাহাদাত আঙ্গুল ও বৃদ্ধাঙ্গুল মিলাবে এবং তাতে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে তার চোখ কোন দিন অসুস্থ হবে না।
দলীল নং-৮: সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমাম, ইমাম আবুল আব্বাস আহমদ বিন আবু বকর রাওয়াদ ইয়েমেনি সূফী তার ‘মাওজিবাতুর রাহমাহ ওয়া আযঈমুল মাগফিরাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
قَالَ اِبْنُ صَالِحٍ وَسَمِعْتُ ذَالِكَ اَيْضًا مِنَ الْفَقِيْهِ مُحَمَّدَ بْنَ الزَّرَنِدِيِّ عَنْ بَعْضِ شُيُوْخِ الْعِرَاقِ وَالْعَجَمِ وَاَنَّهُ يَقُوْلُ عِنْدَ يَمْسَحُ عَيْنَيْهِ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا سَيَّدِيْ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ يَا حَبِيْبَ قَلْبِيْ وَيَا نُوْرَ بَصْرِيْ وَيَا قُرَّةَ عَيْنِيْ وَقَالَا لِيْ كُلُّ مُنْذُ فَعَلْتُهُ لَمْ تَرْمَدْ عَيْنِيْ-
অর্থাৎ- ইবনে সালেহ বর্ণনা করেন, আমি এই আমল ফকীহ মুহাম্মদ বিন যরন্দী থেকেও শুনেছি এবং ইরাক ও অনারব বিশ্বে অনেক মাশায়েখও বর্ণনা করেছেন, তাদের বর্ণনায় এটাও আছে যে, চোখ মোছার সময় এই দুরূদ পড়বে
صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا سَيَّدِيْ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ يَا حَبِيْبَ قَلْبِيْ وَيَا نُوْرَ بَصْرِيْ وَيَا قُرَّةَ عَيْنِيْ-
এবং ঐ দুই মহান ব্যক্তি, শায়খ মুহাম্মদ মিসরী ও শায়খ ফকীহ মুহাম্মদ আমাকে বলেছেন, আমি এই আমল যখন থেকে করছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত কখনো আমার চোখ অসুস্থ হয়নি।
অতঃপর ইবনে সালেহ বলেন-
وَاللّٰهِ الْحَمْدُ وَالشُّكْرُ مُنْذُ سَمِعْتُهُ مِنْهُمَا اِسْتَعْمَلْتُهُ فَلَمْ تَرْمَدْ عَيْنِيْ وَارْجُوْ اَنْ مَا فِيْهِمَا تَدُوْمُ وَاَنِّيْ اَسْلَمُ مِنْ الْعَمِّيْ اِنْشَاءَ اللّٰهُ تَعَالٰيْ-
মহান রবের শুকরিয়া ও প্রশংসা, আমি যখন এই মহান দু’জন বুযুর্গ মাশায়েখ থেকে এই আমলের কথা শুনেছি, তখন থেকে এই বরকতময় আমল আমি করতে শুরু করলাম এবং তখন থেকে এখনও পর্যন্ত আমার চোখে কোন ব্যাথা অনুভব হয়নি। আমি আশা করছি আমার চোখ সর্বদা ভাল ও সুস্থ থাকবে এবং কখনো অন্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।
দলীল নং-৯: ইলমে ফিকহর প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘আল মুখতাসারুল কুদুরীর’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘জামেউল মুজমিরাত’ গ্রন্থের লেখক উস্তাজুল উলামা আল্লামা ইউসুফ বিন ওমরের ছাত্র, ফকীহদের ইমাম আরেফ বিল্লাহ সায়্যিদি ফজলুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব সোহরাওয়ার্দি তার ফাতওয়া এ সুফিয়া এবং উলামাদের আশ্রয়স্থল ইমাম আব্দুল আলী বরজন্দী তার প্রসিদ্ধ কিতাব শরহে নেক্বায়া গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
وَاَعْلَمْ اَنَّهُ يَسْتَحِبُّ اَنْ يُّقَالَ عِنْدَ سِمَاعِ الْاُوْلِي مِنَ الشَّهَادَةِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَ عِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهُمَا قُرَّةُ عَيْنِيْ بِكَ يَا رُسُوْلَ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ يُقَالُ اَللَّهُمَّ مَتِّعْنِيْ بِالسَّمْعِ وَالْبَصْرِ بَعْدَ وَضَعَ ظُفْرِيْ الْاِبْهَا مَيْنِ عَلٰيْ الْعَيْنَيْنِ فَاِنَّهُ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰي عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ لَهُ قَائِدًا اِلٰيْ الْجَنَّةِ وَكَذَا فِى كَنْزِ الْعِبَاد
অর্থাৎ- জেনে রাখুন, অবশ্যই মুস্তাহাব যে, যখন আযানে প্রথমে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলতে শুনবে তখন সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবে এবং দ্বিতীয়বার যখন বলতে শুনবে তখন বলবে, কুররাতু আইনি বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ, অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখের উপর চুমু খেয়ে তা চোখের উপর রেখে বলবে اَللَّهُمَّ مَتِّعْنِيْ بِالْسَّمْعِ وَالْبَصْرِ এর আমলকারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে নিয়ে যাবেন। এই বর্ণনা ‘কানযুল ইবাদ’ নামক গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।
দলীল নং-১০: শায়খুল মাশায়েখ, খাতেমুল মহাক্কেকীন, মক্কা শরীফে হানাফী ইমামদের সম্মানিত ইমাম আল্লামা শাহ জামাল বিন আব্দুল্লাহ ওমর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার ফাতওয়ায় বর্ণনা করেন-
سُئِلَتْ عَنْ تَقْبِيْلِ الْاِبْهَامَيْنِ وَوَضَعْهُمَا عَلٰى الْعَيْنَيْنِ عِنْدَ ذِكْرِ اِسْمِهِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ الْاَذَانِ هَلْ هُوَ جَائِزٌ اَمْ لَا؟ اَجِبْتُ بِمَا نَصَّهُ نَعَمْ تَقْبِيْلُ الْاِبْهَامَيْنِ وَوَضَعْهُمَا عَلٰى الْعَيْنَيْنِ عِنْدَ ذِكْرِ اِسْمِهِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ جَائِزٌ بَلْ هُوَ مُسْتَحَبٌّ صَرَّحَ بِهِ مَشَائِخُنَا فِىْ كُتُبِ مُتَعَدَّدَةٌ
অর্থাৎ- আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে আঙ্গুল চুম্বন করে তা চোখে লাগানো জায়েয কি- না? আমি এসব বাক্য দ্বারা উত্তর দিলাম, হ্যাঁ আযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে আঙ্গুল চুম্বন করে চোখে লাগানো জায়েয, বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাযহাবের বিজ্ঞ মাশায়েখগণ তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এই আমলকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন।
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ’ ﺍَﺷْﻬَﺪُ ﺍَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَّﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ উচ্চারণ করে, তখন স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় বা শাহাদাত আঙ্গুল চুম্বন করে চক্ষুদ্বয়ে লাগানো মুস্তাহাব এবং মুস্তাহসান এতে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে ।সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুম আজমাইন উনাদের থেকে এটা প্রমাণিত আছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত উনার অনুসারীগণ এই আমলকে মুস্তাহাব মনে করে পালন করেন।
প্রসিদ্ধ "সালাতে মাস্উদী" কিতাবের দ্বিতীয় খন্ড ﻧﻤﺎﺯ শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত আছে-
"যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম মুবারক শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপর রাখে, আমি তাকে কিয়ামতের কাতার সমূহে খোঁজ করবো এবং নিজের পিছে পিছে বেহেশতে নিয়ে যাব।" সুবহানাল্লাহ
তাফসীরে রূহুল বয়ানে ষষ্ঠ পারার সূরা মায়েদার আয়াত ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻧَﺎﺩَﻳْﺘُﻢْ ﺍِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠﻮﺓِ ﺍﻻﻳﺔ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে-
"মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলার সময় নিজের শাহাদাতের আঙ্গুল সহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু দেয়ার বিধানটা জঈফ রেওয়াতের সম্মত। কেননা যদিও এ বিধানটা মরফু হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিছীন কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় জঈফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা জায়েয।
ফাত্ওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ড ﺍﻻﺫﺍﻥ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
"আযানের প্রথম ﺍَﺷْﻬَﺪُ ﺍَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَّﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ বলার সময়- ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলা মুস্তাহাব এবং দ্বিতীয় শাহাদত বলার সময়- ﻗُﺮﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﺑِﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (কুর্রাতু আইনী বিকা ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলবেন। অতঃপরনিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবেন এবং বলবেন- ﺍﻟَﻠﻬُﻢَّ ﻣَﺘِّﻌْﻨِﻰْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟْﺒَﺼَﺮِ
(আল্লাহুম্মা মাত্তায়িনী বিসসাময়ি ওয়াল বছরি)
এর ফলে নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন।
অনুরূপ কনযুল ইবাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়াতেও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে।
কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে-
"যে ব্যক্তি আযানে ‘আশহাদুআন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে, আমি তাকে আমার পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাব এবং ওকে বেহেশতের কাতারে অন্তর্ভূক্তকরবো।"সুবাহানাল্লাহ
এর পরিপূর্ণ আলোচনা ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকায় বর্ণিত আছে।
উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি কিতাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- শামী, কনযুল ইবাদ, ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়া, কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকা।
ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব বলা হয়েছে।
ﻣﻘﺎﺻﺪ ﺣﺴﻨﻪ ﻓﻰ ﺍﻻﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺪﺋﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻨﺔ নামক গ্রন্থে ইমাম সাখাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিবর্ণনা করেছেন-
ইমাম দায়লমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘ফিরদাউস’ কিতাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীকরাদ্বিয়াল্লাহু আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, "মুয়াযযিনের কন্ঠ থেকে যখন ‘আশহাদু আন্না৷মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শোনা গেল, তখন তিনি তাই বললেন এবং স্বীয় শাহাদতের আঙ্গুলদ্বয়ের ভিতরের ভাগ চুমু দিলেন এবং চক্ষুদ্বয়ে লাগালেন।
তা’দেখে নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান, "যে ব্যক্তি আমার এই প্রিয়জনের মত করবে, তাঁর জন্য আমার সুপারিশ অপরিহার্য।”সুবহানাল্লাহ
এ হাদীছটি অবশ্য বিশুদ্ধ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত নয়। উক্ত মাকাসেদে হাসনা গ্রন্থে আবুল আব্বাসের রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত মুজেযাত গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে-
হযরত খিযির আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত আছে-
যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ’ শোনে যদি বলে-
ﻣَﺮْﺣَﻴًﺎﺑِﺤَﺐِﻳْﺒِﻰْ ﻭَﻗُﺮَّﺓِ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ (মারাহাবা
বি হাবীবী ওয়া কুররতি আইনী মুহাম্দ ইবনে আবদুল্লাহ আলাইহিস সালাম ) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখ কখনও পীড়িত হবে না।
উক্তগ্রন্থে আরোও বর্ণনা করা হয়েছে-
হযরত মুহম্মদ ইবনে বাবা নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে এক সময় জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। তখন তাঁর চোখে একটি পাথরের কনা পড়েছিল যা বের করতে পারেনিএবং খুবই ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। যখন তিনি মুয়াযযিনের কণ্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মদাররসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে চোখ থেকে পাথর বের হয়ে গেল।
একই ‘মাকাসেদে হাসনা’ গ্রন্থে হযরত শামস মুহম্মদ ইবনে সালেহ মদনী থেকে বর্ণিত আছে যে,
তিনি ইমাম আমজদ (মিসরের অধিবাসী পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের অন্তর্ভূক্ত) কে বলতে শুনেছেন-যে ব্যক্তি আযানে নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শোনে স্বীয় শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী একত্রিত করে- ﻭَﻗَﺒَّﻠَﻬُﻤَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﺑِﻬِﻤَﺎ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﺮْ ﻣُﺪْ ﺍَﺑَﺪًﺍ উভয় আঙ্গুলকে চুম্বন করে চোখে লাগাবে, কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না।
ইরাক- আযমের কতেক মাশায়েখ বলেছেন যে, যিনি এ আমল করবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্ত হবে না। ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟِﻰْ ﻛُﻞّ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﻣُﻨﺬُ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻪُ ﻟَﻢْ ﺗَﺮْﻣُﺪْ ﻋَﻴْﻨِﻰ কিতাব রচয়িতা বলেছেন- যখন থেকে আমি এ আমল করেছি আমার চক্ষু পীড়িত হয়নি।
কিছু অগ্রসর হয়ে উক্ত‘মকাসেদে হাসনা’গ্রন্থে আরও বর্ণিত হয়েছে-
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦِ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻭَﺍَﻧَﺎ ﻣُﻨْﺬُ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ﺍِﺳْﺘَﻌْﻤَﻠْﺘَﻪُ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺮْﻣُﺪْ ﻋَﻴْﻨِﻰْ
ﻭَﺍَﺭْﺟُﻮْﺍ ﺍَﻥَّ ﻋَﺎﻓِﻴَﺘَﻬُﻤَﺎ ﺗَﺪُﻭْﻡُ ﻭَﺍِﻧِّﻰْ ﺍَﺳْﻠَﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻤﻰ ﺍِﻧْﺸَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪُ
হযরত ইবনে সালেহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন- যখন আমি এ ব্যাপারে জানলাম, তখন এর উপর আমল করলাম।এরপর থেকে আমার চোখে পীড়িত হয়নি। আমি আশা করি, ইনশাআল্লাহ এ আরাম সব সময় থাকবে এবং অন্ধত্ব মুক্ত থাকবো।
উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে,
ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শোনে যদি বলে এবং ﻣَﺮْﺣَﺒًﺎ ﺑِﺤَﺒِﻴْﺒِﻰْ ﻭَﻗُﺮَّﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে এবং বলবে ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻢَ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣَﺪْ তাহলে কখনও সে অন্ধ হবে না এবং কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না।
মোট কথা হলো ‘মাকাসেদে হাসনা’ গ্রন্থে অনেক ইমাম থেকে এ আমল প্রমাণিত করা হয়েছে।
শরহে নেকায়ায় বর্ণিত আছে- জানা দরকার যে মুস্তাহাব হচ্ছে যিনি দ্বিতীয় শাহাদতের প্রথম শব্দ শোনে বলবেন;
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং দ্বিতীয় শব্দ শোনে বলবেন-ﻗُﺮَّﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﺑِﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (কুররাতু আইনি বিকা ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুক্ষদ্বয়ে রাখবেন, ওকে হুযূর (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন।
অনুরূপ কনযুল ইবাদেও বর্ণিত আছে। মাওলানা জামাল ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর মক্কী স্বীয় ফাত্ওয়ার কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
ﺗَﻘْﺒِﻴْﻞُ ﺍﻟْﺎِﺑﻬَﺎﻣَﻴْﻦِ ﻭَﻭَﺿْﻊُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌَﻴْﻨَﻴْﻦِ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻛْﺮِ ﺍﺳْﻤِﻪ ﻋَﻠَﻴﻪِ
ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﺎَﺫَﺍﻥِ ﺟَﺎﺋِﺮ ﺑَﻞْ ﻣُﺴْﺘَﺤَﺐ ﺻَﺮَّﺡَ ﺑِﻪ ﻣَﺸَﺎﺋِﺨِﻨَﺎ
আযানে নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো জায়েয বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাশায়েখে কিরাম এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা মুহম্মদ তাহির রহমাতুল্লাহি আলাইহি ﺗﻜﻤﻠﺔ ﻣﺠﻤﻊ ﺑﺨﺎﺭ ﺍﻻﻧﻮﺍﺭ গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছকে ‘বিশুদ্ধ নয়’ মন্তব্য করে বলেন-
ﻭَﺭُﻭِﻯَ ﺗَﺠﺮِﺑَﺔ ﺫَﺍﻟِﻚَ ﻋَﻦْ ﻛَﺜِﻴْﺮِﻳْﻦَ “(কিন্তু এ হাদীছ অনুযায়ী আমলের বর্ণনা অনেক পাওয়া যায়।)” আরও অনেক ইবারত উদ্ধৃত করা যায়। কিন্তু সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে এটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম।
হযরত সদরুল আফাযেল মাওলানা সৈয়দ নঈম উদ্দীন সাহেব কিবলা মুরাদাবাদী বলেছেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ইনজিল’ গ্রন্থের একটি অনেক পুরানো কপি পাওয়া গেছে, যেটার নাম ‘ইনজিল বারনাবাস’। ইদানীং এটা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এবং প্রত্যেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
এর অধিকাংশ বিধানাবলীর সাথে ইসলামের বিধানাবলীর মিল রয়েছে। এ গ্রন্থের এক
জায়গায় লিখা হয়েছে যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন রূহুল কুদ্দুস ( নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে দেখার জন্য আরজু করলেন, তখন সেই নুর উনার বৃদ্ধাঙ্গুলের নখে চমকানো হলো। তিনি মহব্বতের জোশে উক্ত
নখদ্বয়ে চুমু দিলেন এবং চোখে লাগালেন। (রূহুল কুদ্দুসের অর্থ নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কেন করা হলো? কারণ ঈসা আলাইহিস সালাম উনার যুগে রূহুল কুদ্দুস নামেই নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মশহুর ছিলেন।
হানাফী আলিমগণ ছাড়াও শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের আলিমগণও বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে একমত।
যেমন শাফেঈ মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব – ﺍﻋﺎﻧﺔ ﺍﻟﻄﺎﻟﺒﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺣﻞ ﺍﻟﻔﺎﻅ ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻤﻤﻌﻴﻦ এর ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
ﺛُﻢَّ ﻳُﻘَﺒِّﻞَ ﺍِﺑْﻬَﺎ ﻣَﻴْﻪِ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠﻰ ﻋَﻠْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻢِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣُﺪْ
ﺍَﺑَﺪًﺍ
“(অতঃপর নিজের বৃন্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিয়ে চোখে
লাগালে, কখনও অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু
পীড়া হবে না।)”
মালেকী মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব- ﻛﻔﺎﻳﺔ ﺍﻟﻄﺎﻟﺐ ﺍﻟﺮﺑﺎﻧﻰ ﻟﺮﺳﺎﻟﺔ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺯﻳﺪ ﺍﻟﻘﻴﺮﺩﺍﻧﻰ এর প্রথম খন্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলার পর লিখেছেন- ﺛُﻢَّ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﺍِﺑْﻬَﺎﻣَﻴْﻪِ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠﻰ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﻌﻢِ
ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣُﺪْ ﺍَﺑَﺪًﺍ “(অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেবে এবং চোখে লাগাবে, তাহলে কখনও অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আলী সাঈদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ﻋﺪﻭﻯ নামক কিতাবের ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন- গ্রন্থকার বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের সময়ের কথা উল্লেখ করেনি। অবশ্য শেখ আল্লামা মুফাসসির নুরুদ্দীন খুরাসানী থেকে বর্ণিত আছে, তিনি কতেক লোককে আযানের সময় লক্ষ্য করেছেন যে যখন তারা মুয়ায্যিনের মুখে আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমুদিলেন এবং নখদ্বয়কে চোখের পলকে এবং চোখের কোণায় লাগালেন এবং কান পর্যন্ত বুলিয়ে নিলেন। শাহাদাতের সময় এ রকম একবার একবার করলেন। আমি ওদের একজনকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন আমিবৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিতাম কিন্তু মাঝখানে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার চক্ষু রোগ হয়। এর মধ্যেএক রাতে আমি নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখলাম। নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখে লাগানো কেন ছেড়ে দিয়েছেন? যদি আপনি চান, আপনার চোখ পুনরায় ভালহোক, তাহলে আপনি পুনরায় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখেলাগানো আরম্ভ করুন’। ঘুম ভাঙ্গার পর আমি পুনরায় এ আমল শুরু করে দিলাম এবং আরোগ্য লাভ করলাম। আজ পর্যন্ত সেই রোগে আর আক্রান্ত হইনি৷
সুবহানাল্লাহ
শাফীঈ ও মালেকী মযহাবের ইমামগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া সস্পর্কে রায় দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করেছেন এবং আমলও করছেন। এআমল নিম্নবর্ণিত ফায়দা গুলো রয়েছেঃ
আমলকারীর চোখ রোগ থেকে মুক্ত থাকবে, ইনশাআল্লাহ কখনও অন্ধ হবে না, যে কোন চক্ষু রোগীর জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের আমলটি হচ্ছে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা। এটা অনেকবার পরীক্ষিত হয়েছে।
- সুত্রঃ জা’আল হক (২য় খন্ড)
আজানের সময় নবীজির নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানো, এটি মুস্তাহাব এবং জান্নাতি হওয়ার আমল।
-----------------------------------------------------------------------
দলিল >> তাফসীরে জালালাইন শরীফ কিতাবের ৩৫৭পৃষ্ঠার ১৩নং হাশিয়ায় লিখা রয়েছে >>
قال القهستاني عن كنز العباد أنه يستحب أن يقول عند سماع الأولى من الشهادتين للنبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليك يا رسول الله وعند سماع الثانية قرت عيني بك يا رسول الله ثم يقال اللهم متعني بالسمع والبصر بعد وضع إبهامه على عينيه فإنه صلى الله عليه وسلم يكون قائدا له في الجنة
অর্থ- ইমাম কুহিস্তানী রহিমাহুল্লাহ তিনি কানযুল ইবাদ কিতাবের উদ্ধিতি দিয়ে বর্ণনা করে বলেছেন যে, নিশ্চই মুস্তাহাব হলো- যখন কেউ আজানের সময় আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ বলতে শুনবে, তখন বলবে صلى الله عليك يا رسول الله আর যখন দ্বিতীয়বার শুনবে, তখন বলবে قرة عينى بك يا رسول الله তারপর এই দোয়া পড়বে اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়ার পর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে চোখে লাগাবে। যারা এই আমল করবে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে নবীজিপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের পিছনে টেনে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ।
(এছাড়া এটি ইমাম তাহতাভী রহিমাহুল্লাহ তিনি উনার মারাকিল ফালাহ কিতাবের ১ম খন্ড ২০৬ পৃষ্ঠাতেও বর্ননা করেছেন, মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া ১ম খন্ড ১৮৯পৃষ্ঠা এবং ফাতাওয়ায়ে শামী কিতাবের ১ম খন্ড ৩৯৮পৃষ্ঠাতেও উল্লেখ আছে)
আর এই আমলটি স্বয়ং হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খাছ সুন্নাতি আমল। সুবহানাল্লাহ।
(আহসানুল ফাতাওয়া কিতাবের ১খন্ড ১৭৯পৃষ্ঠায় এই ব্যাপারে হাদীস শরীফ উল্লেখ রয়েছে)
Comments
Post a Comment